মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, রায়গঞ্জ, বিএনএ: কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে সাফল্যের পর এবারে জেলার তিনটি পুরসভা দখলে ঘুঁটি সাজাচ্ছে উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। ডালখোলা, ইসলামপুর এবং কালিয়াগঞ্জ— ২০২০ সালে এই তিনটি পুরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। তিনটি পুরসভাতেই ক্ষমতা দখলে দল স্বচ্ছ, সৎ ভাবমূর্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষদের পুরভোটে প্রার্থী করে তিনটি শহরের ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে চায় তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, আমাদের দলে রয়েছেন, এমন বেশ কিছু কাউন্সিলারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নেই, তাঁদের দল পুরভোটে টিকিট দেবে না। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোকদের তিনটি পুরভোটে প্রার্থী করার জন্য খোঁজখবর শুরু করা হয়েছে। কংগ্রেস সহ বিভিন্ন দল থেকে দলবদল করে তৃণমূল কংগ্রেসে আসা বেশ কয়েকজন কাউন্সিলারের কাজকর্ম নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই প্রশ্ন রয়েছে। পুর এলাকার মানুষ এমন অনেককেই পছন্দ করেন না। তাঁদের সরিয়ে দিয়ে স্বচ্ছ ও সৎ মানুষদের হাতে পুরসভার শাসকক্ষমতা তুলে দিতে চায় রাজ্যের শাসকদল।
উত্তর দিনাজপুর জেলার ডালখোলা পুরসভায় এখন প্রশাসক রয়েছে। কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে জেলার তিনটি পুরসভার নির্বাচন হতে পারে। জেলার ওই তিনটি পুরসভার ওই নির্বাচনকে সেমিফাইনাল ধরে নিয়ে ঘর গোছানোর কাজ এখন থেকে শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার ক্ষমতায় এলেও দলীয় টিকিটে জেতা প্রার্থীদের দিয়ে তারা উত্তর দিনাজপুরের একটিও পুরসভার ক্ষমতা এতদিন দখল করতে পারেনি। বিরোধী দলের কাউন্সিলারদের দলে টেনে তিনটি পুরসভার ক্ষমতা শাসকদল দখল করলেও এবারে তাদের টার্গেট তিনটি পুর এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে তিনটি পুরসভারই ক্ষমতা দখল করা। কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের পর এবারই প্রথম তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে এসেছে। ফলে শাসকদলের ওই সাফল্য দলের জেলা নেতাদের আত্মবিশ্বাসকে মজবুত করেছে। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তপন দেবসিংহকে বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী করে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচনে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় শাসকদলের কাছে লড়াইটা যথেষ্টই কঠিন ছিল। মাত্র ছয়মাসের মধ্যে প্রায় ৫৭ হাজার ভোটের ব্যবধান টপকে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শাসকদলে অনেকের নাম উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে উঠে এলেও শেষ পর্যন্ত টিম প্রশান্ত কিশোর ভালো ভাবমূর্তির মানুষ হিসেবে তপন দেবসিংহের পক্ষেই সিলমোহর দিয়েছিল। শাসকদলে থাকার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করা, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করা নিয়ে নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল তারা। বিধানসভা উপনির্বাচনে সুবিধাভোগী ওই নেতাদের অনেককে প্রচারেও নামতে দেওয়া হয়নি। পুরসভার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রভাবশালী নেতাদের অনেকের গতিবিধির উপর উপনির্বাচনে নজরদারি চলছে। গত লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হলেও কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে দলের জেলা সভাপতি করায় পুরনো দিনের দলের অনেক নেতাকর্মী ফের মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন।
কানাইয়াবাবু জানিয়েছেন, তিনটি পুরসভায় আমাদের দলের সব জনপ্রতিনিধিদের কাজকর্ম, জনসংযোগ, জনপ্রিয়তার উপর নজর রয়েছে। যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তাঁরাই সামনের পুরভোটে টিকিট পাবেন। যাদের বিরুদ্ধে ভোটারদের অভিযোগ রয়েছে, সামনের পুরভোটে তাঁকে টিকিট দেওয়া হবে না।