বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ঝাড়খণ্ড থেকে পুরাতন মালদহ শহরের এক ইটভাটায় বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছে সেলিম আনসারি, অরবিন্দ পাসোয়ান, নীতীশ রাইরা। সেলিম, অরবিন্দ, নীতীশরা প্রায় একই সুরে জানায়, আমাদের বাড়ি অনেক দূরে। ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছি। বন্ধুদের ফেলে এখানে চলে এসেছি। কী করব? বাড়িতে কেউ থাকে না। সবাই কাজ করতে এদিক ওদিক যায়। তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে আমিও চলে এসেছি। সেলিম, নীতীশ ক্লাস ফাইভে পড়ত। অরবিন্দ সিক্সে। তারা বলে আমরা স্কুলে যাব কখন? বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় তো এইখানে ইটভাটাতেই থাকি। মাঝে মাঝে পড়াশুনা করি। বরই নিয়ে এসেছি। পরীক্ষার সময় বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসবো। আমরাও বাবা-মায়ের সঙ্গে ইটভাটাতে কাজ করি। বাবা ইট বানায়। সেই ইট রোদে শুকোনোর সময় দিনভর উল্টে দিতে হয়। আমরা সারা দিনে অনেক ইট উল্টে দিই। এছাড়াও আরও নানা টুকটাক কাজ করি। আমাদের মতো আরও অনেক বাচ্চা এখানে আছে।
নারায়ণপুরের বাজারে সব্জি নিয়ে বসে আরও এক খুদে। নাম জিজ্ঞেস করলেও বলতে চাইলো না সে। এক কেজি টম্যাটোর দাম জানা আছে। আড়াইশো গ্রাম চাইলে মুহূর্তে দাঁড়িপাল্লায় চাপিয়ে ওজন করে দাম বলে দিতে পারে। কিন্তু স্কুলে যায় না। পড়াশুনার কথা জানতে চাইলেই মুখ ভার। সেই খুদে সব্জি বিক্রেতা জানাল, আমার খুব পড়তে ইচ্ছে করে। আগে ভালো করে পড়াশুনা করতাম। স্কুলে যেতাম। এখন বছর খানেক ধরে আর যাই না। বাবা অসুস্থ। বাড়িতে পড়ে রয়েছে। কোনও কাজ করতে পারে না। তাহলে টাকা আসবে কোথা থেকে? খাবো কী? তাই আমি বাজারে সব্জি নিয়ে বসছি। ভালোই বিক্রি হয়। দু’বেলা ভাত জুটে যাচ্ছে। সব্জি বিক্রি করি বলে স্কুল যেতে পারি না। এটা আমার দাদুর দোকান। ব্যবসা করা শিখছি। বাড়িতে পড়াশুনার কথা বলতেই ভয় করে।
মৌলপুরের মাংস বিক্রেতা আজারুদিনের ব্যপার অবশ্য অন্যরকম। স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল বাড়ির লোক। ভালো লাগে না, তাই যায় না। আজারুদ্দিন জানায়, আমার পড়াশুনা করতে একদম ভালো লাগে না। তাই এখানে বসে পোল্ট্রির মুরগি বিক্রি করছি। স্কুলের খাতায় নাম রয়েছে। তবে যাই না। এই দোকান দেখাশুনা করি। বাকি সময় এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই।
মালদহ বিধানসভার অন্তর্গত এই পুরাতন মালদহ এলাকার অনেকটাই তফসিলি জনজাতি অধ্যুষিত। এই এলাকার শিশুদের একটা বড়ো অংশ বিভিন্ন ইটভাটা, সদরের হোটেল, চায়ের দোকান বা মিষ্টির দোকানগুলিতে কাজ করে। জেলা প্রশাসনের দাবি, আগের থেকে স্কুলছুট শিশুর সংখ্যা কমেছে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগ্রহও বেড়েছে। কিন্তু এখনও পথেঘাটে শিশুশ্রমিকদের নজরে পড়বে।