সংবাদদাতা, নকশালবাড়ি: বৃহস্পতিবার রাতে নকশালবাড়ির উপর দিয়ে যাওয়া এশিয়ান হাইওয়ে-২’তে দ্রুত গতিতে যাওয়া ছোট গাড়ির ধাক্কায় একটি হস্তিশাবক গুরুতরভাবে জখম হয়। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাতে সেখানে পৌঁছন কার্শিয়াংয়ের ডিএফও। হাতিটি জখম হয়ে জঙ্গলে গেলেও প্রায় চার ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর বনকর্মীরা সেটির সন্ধান পান। রাতভর সেটিকে চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ করে তোলা হয়। এদিন সকালে হাতিটি গভীর জঙ্গলে চলে যায়। সেটির উপর বনকর্মীরা নজর রাখছেন। ওই রাস্তায় হাতির করিডরে গাড়ির গতি কম রাখার জন্য নির্দেশ সংক্রান্ত বোর্ড থাকলেও কেউ তা মানছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ছোট গাড়ির দুই আরোহী সামান্য জখম হন। তাঁদের নকশালবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিস জানিয়েছে, চালকের নাম অনিন্দ রায় এবং তার সঙ্গে ছিলেন প্রসেনজিৎ বসু। তাঁদের দু’জনের বাড়ি শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ায়।
কার্শিয়াংয়ের ডিএফও শেখ ফরিদ বলেন, ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন অ্যাক্ট অনুযায়ী ঘটনার তদন্ত চলছে। শাবকটি বর্তমানে সুস্থ আছে। তবে সেটিকে আমরা কিছুদিন নজরে রাখব।
বেঙ্গল সাফারির চিকিৎসক নিক ডোলে বলেন, হাতিটির বাঁ পা’টি ভেঙেছে। হাতিটির চোট গুরুতর। অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যাথা কমার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। সেটিকে ক’দিন নজরে রাখা হবে।
নকশালবাড়ি থানার ওসি সুজিত দাস বলেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বনবিভাগের অভিযোগ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
এশিয়ান হাইওয়ে-২’র শিলিগুড়ির প্রজেক্ট ডিরেক্টর জীতেন্দ্রকুমার প্যাটেল বলেন, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বোর্ড সেখানে থাকলেও চালকরা মানছেন না। পুলিসকে এনিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় নকশালবাড়ি ব্লকের দেওমুনির কিরণচন্দ্র চা বাগান সংলগ্ন এশিয়ান হাইওয়েতে দুর্ঘটনাটি ঘটে। সম্প্রতি দ্রুত গতিতে মোটর বাইক ছুটিয়ে যাওয়ার সময়ে হাতির সামনে পড়ে গেলে জোরে ব্রেক কষতেই দুই যুবক আছড়ে পড়ে জখম হন। বনদপ্তর জানিয়েছে, গাড়ির ধাক্কায় দু’বছর বয়সি স্ত্রী হস্তিশাবকটি মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। বাগডোগরার দলকা বনাঞ্চলে ৪৫টি হাতি আছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে হাতিগুলি বনাঞ্চল থেকে খাবারের সন্ধানে পাশের গ্রামগুলিতে হানা দেয়। ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ মা হাতি সহ দু’টি শাবক রাস্তা পারাপার করে। সেসময়ে নকশালবাড়ি থেকে শিলিগুড়িগামী একটি ছোট গাড়ি একটি হস্তিশাবককে ধাক্কা মারে। মা হাতিটি গাড়িটি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে শাবককে রাস্তার পাশে নিয়ে যায়। ওই ঘটনার পর রাস্তায় ব্যাপক যানজট হয়। মা হাতিটি একসময়ে রাস্তায় উঠে সকলকে তাড়া করে। বাগডোগরা রেঞ্জের বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মা হাতিটিকে জঙ্গলে ফিরিয়ে দেয়। রাতেই বেঙ্গল সাফারির পশুচিকিৎসককে নিয়ে আসা হয়। রাত ১২টার পর শাবকটির সন্ধান মেলে। সেটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে চিকিৎসা শুরু করা হয়। রাত ২টোয় হাতিটিকে সুস্থ করা হয়। ভোর পর্যন্ত সেটিকে পর্যবেক্ষণে রাখেন বনকর্মীরা।