সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার, বিএনএ: বরাবরের রীতি ও নিয়ম মেনেই কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলার সূচনা একইদিনে অর্থাৎ আগামী ১১ নভেম্বরই হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার রাসমেলায় আসছেন। সেই কারণে পুরসভা চেয়েছিল ১১ নভেম্বরের পরিবর্তে ১৩ নভেম্বর তাঁকে দিয়ে রাসমেলার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করাতে। কিন্তু বহু বছর ধরে মদনমোহন মন্দিরে রাস উৎসব ও রাসমেলার সূচনা একইদিনে হয়ে আসছে। মুখ্যমন্ত্রী আসার কারণে রাসমেলার অনুষ্ঠানের সূচনা দু’দিন পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। এ নিয়ে কিছুটা বির্তক শুরু হয়। এরপরেই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই রীতিকে পরিবর্তন না করে একইদিনে রাস উৎসব ও রাসমেলার সূচনা হচ্ছে। তবে কোচবিহার পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর কোচবিহারে এসে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেওয়া ও রাসমেলায় ঘোরার দিনক্ষণ অপরিবর্তিতই থাকছে।
কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূল কংগ্রেসের ভূষণ সিং বৃহস্পতিবার বলেন, রাসমেলার উদ্বোধন ১১ নভেম্বরই হবে। মুখ্যমন্ত্রী ১৩ নভেম্বর আসবেন। তিনি মদনমোহন মন্দিরে যাবেন। রাসমেলাতেও ঘুরবেন। পরের দিন ১৪ নভেম্বর তিনি দলীয় কর্মীদের নিয়ে মিটিং করবেন। এখনও পর্যন্ত সেই সূচি আছে। মদনমোহন মন্দিরের রাস উৎসব ও মেলার সূচনা পরম্পরা মেনে একই দিনে হবে।
কোচবিহারের সুপ্রাচীন মদনমোহন মন্দিরে রাস উৎসবের সূচনা ও রাসমেলা একইদিনে শুরু হওয়ার একটা রীতি দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে। সম্প্রতি শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক মিটিংয়ে যোগ দেন। সেই সময়ে কোচবিহারের রাসমেলায় আসার জন্য তাঁকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। তিনি সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, উদ্বোধনের দিন আসতে না পারলেও রাসমেলা চলাকালীন কোনও একদিন আসবেন। এরপর জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয় ১৩ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারে আসবেন। সেদিন তিনি রাসমেলায় ও মদনমোহন মন্দিরে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রী আসছেন এই বিষয়টি জানার পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল মেলার উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রী হাত দিয়েই করানো হবে। সেই কারণে ১১ নভেম্বর মদনমোহন মন্দিরে রাস উৎসবের সূচনা হলেও রাসমেলা ১৩ তারিখ থেকে শুরু হবে বলে জানানো হয়েছিল।
এই বিষয়টি সামনে আসতেই কোচবিহারের বিভিন্ন মহলে বির্তক শুরু হয়। প্রাচীন রীতিকে ভেঙে কেন একইদিনে রাস উৎসব ও রাসমেলা শুরু হবে না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এনিয়ে তৃণমূল শিবির অস্বস্তিতে পড়ে যায়। বৃহস্পতিবার কোচবিহার পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস উৎসব ও রাসমেলা একইদিনে শুরু হবে। মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব নির্ধারিত দিনে এসে দুই জায়গাতেই যাবেন। ১৪ নভেম্বর কোচবিহারের নেতাজি সুভাষ ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তিনি কর্মীদের নিয়ে বসবেন।
রাসমেলা উপলক্ষে প্রতিবছর কোচবিহারে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। ১৫ দিন ধরে রাসমেলা মাঠে এই মেলা চলে। সেই সঙ্গে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পুণ্যার্থীরা মদনমোহন মন্দির চত্বরে প্রবেশ করে সেখানে থাকা রাসচক্র ঘোরান, মন্দিরে পুজো পাঠ চলে। এই বিরাট আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জেলা ও স্থানীয় পুরসভা প্রশাসন, পুলিস সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক আয়োজন করা হয়। এই বিরাট কর্মযজ্ঞের মাঝে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসায় গোটা প্রস্তুতিপর্ব একেবারে অন্যমাত্রা পেয়েছে।
এদিন বিকেলে কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান ভূষণ সিং রাসমেলার মাঠ পরিদর্শন করেন। রাসমেলার মাঠে ইতিমধ্যেই মঞ্চ তৈরি, স্টল বানানোর কাজ চলছে। রাসমেলা মাঠকে পুরসভা আগেই সাফসুতরো করে দিয়েছে। গোটা মাঠ সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে। অপরদিকে মদনমোহন মন্দিরেও রাস উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। মন্দির রং করা, রাসচক্র বানান হচ্ছে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মন্দিরে এবং মেলামাঠে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরাও বসানো হচ্ছে। রাসমেলাকে ঘিরে শুধু যে মেলার মাঠ ও মদনমোহন মন্দির সেজে উঠছে তাই নয়, মন্দির সংলগ্ন রাস্তার ধারে এখন থেকেই স্টল তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এদিকে রাস উৎসবে অংশ নিতে কামাখ্যা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধুরা আসতে শুরু করেছেন।