বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
বাংলাদেশ, ভুটান ও অসম সীমান্ত সংলগ্ন কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ অনেক দিনের। লোকসভা ভোটের পরও কোচবিহারে রাজনৈতিক হানাহানি কমেনি। ওই জেলায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। এরবাইরে জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে সেখানে মাঝেমধ্যেই গোলমাল হচ্ছে। তবে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা সেভাবে না ঘটলেও সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে মারপিট, খুন, নিখোঁজ সহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটছে। এজন্য তিনজেলার বাসিন্দাদের একাংশ পুলিসের ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। ইতিমধ্যে জেলাগুলি থেকে সরাসরি কিছু অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরেও জমা পড়েছে। এদিন প্রশাসনিক মিটিংয়ে এই ব্যাপারে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী।
মিটিংয়ে মমতা বলেন, কোচবিহার থেকে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে ২৪৭টি। এত অভিযোগ! পুলিস কী করছে? এমন অভিযোগ জলপাইগুড়ি থেকে ১৫৮টি এবং আলিপুরদুয়ার থেকে ১৪৮টি এসেছে। এতে ব্যক্তিগত জমি নিয়ে গোলমাল, খুন, নিখোঁজ সহ বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। এগুলি ব্যাখ্যা করতেও লজ্জা লাগে। সমস্ত অভিযোগ ডিজি’র হাতে তুলে দিচ্ছি। কোন ওয়ার্ডে, কোথায়, কী হয়েছে, কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রভৃতি বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে কেসগুলি শর্টআউট করতে হবে। এরবাইরে জলপাইগুড়িতে জমি সংক্রান্ত ৩২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। একজনের জমি অন্যজন দখল করছে বলে অভিযোগ আছে। কিছু জমির মিউটেনও হচ্ছে না। কোচবিহারে কিছু মানুষ ঘর চেয়েও পাননি। এই বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
এরপর পুলিসের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানাতে থানায় যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আজকে আসুন, কালকে আসুন বলে ঘোরানো হচ্ছে। শেষমেশ ব্যালেন্স করা হচ্ছে। এটা ঠিক হচ্ছে না। পুলিস কর্তাদের সতর্ক করেন তিনি। বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব এসপিদের নিতে হবে। আর এমন পরিস্থিতির দায় ডিজি’কেও নিতে হবে। আপনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখুন। দরকার পরলে এই মিটিংয়ের পর সকলের সঙ্গে বসুন।
রাজ্যে পুলিসের একাংশের বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের নামে পুলিসের একাংশ জুলুমবাজি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাস খানের আগে মেদিনীপুরে একটি প্রশাসনিক সভায় এই ব্যাপারে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সভার পর তাঁর নির্দেশে জাতীয় সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সিভিক ভলান্টিয়ারদের মোতায়েন না করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য পুলিস। এবার মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের তিনজেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিসের ভূমিকা নিয়ে সরব হন। মিটিংয়ের শেষ মুহূর্তে তিনি বলেন, পুলিস ঠিকঠাক কাজ করছে না। এসপিরা শুধু অফিসে বসে থাকছেন। আর আইসি এবং ওসিরা থানায় বসে ব্যালেন্স করছেন। এভাবে চলতে পারে না। এলাকার শান্তি রক্ষা করতে পুলিসকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য সংশ্লিষ্ট জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ফোনে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, পুলিসের একাংশের উদাসীনতার জেরেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। অসামাজিক কাজকর্ম ও দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য, রাজনৈতিক সংঘর্ষ বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নড়েচড়ে বসায় ভালো লাগছে। এবার হয়তো পুলিস কর্তাদের টনক নড়বে।