বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এদিন মাল্লাগুড়ির পুলিস লাইনের মাঠে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিস কমিশনারেটের আয়োজনে এই বিজয়া সম্মিলনী হয়। অনুষ্ঠানে উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলা— দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের বিশিষ্ট নাগরিক, ক্লাব প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ীরা হাজির ছিলেন। লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর শিলিগুড়িতে এটাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম সভা ছিল। বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সভায় এনআরসি নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সবাই শান্তির পরিবার চাই। বাংলা হল শান্তির গঙ্গা। একটি মানুষও বাংলা থেকে কোথাও যাবে না। আমি আপনাদের পাহারাদার। এটা আপনাদের সরকার। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, থাকব। বাংলায় এনআরসি করতে দেব না। করতালিতে ফেটে পড়ে গোটা মাঠ।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন, কৃষ্টি, সংস্কৃতির কথাও উঠে আসে। রাজবংশী সম্প্রদায়ের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজবংশী, কুরুক, কামতাপুরি, নেপালি ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছি। চা বাগানের করম পুজোতে এবং ভাদু উৎসবে ছুটি দিই। এসবের মাধ্যমে সব ধর্মের মানুষকে এক করেছি। আমি ভুল করলে আমাকে ক্ষমা করবেন। আমার কাছে ক্ল্যারিফিকেশন চাইবেন। কিন্তু, একটা ইনফরমেশন জেনে রাখবেন, অসমে এনআরসি থেকে যাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রাজবংশী বেশি। এটা রাজবংশী ভাইরা মাথায় রাখবেন। একই সঙ্গে বিজেপির নাম না করে তিনি বলেন, কেউ কেউ হিন্দিভাষীদের কাছে গিয়ে বলছেন, এনআরসি হলে আপনারা থাকবেন। অন্যরা থাকবে না। রাজবংশী, আদিবাসীদের কাছে গিয়ে বলছেন, আমরা আপনাদের লোক। আপনাদের জন্যই এনআরসি। তারা হিন্দু ও মুসলমান, উর্দুভাষী ও হিন্দিভাষী, রাজবংশী, তফসিলি, আদিবাসী, কৃষক, পাহাড়িয়াদের ভাগ করার কথা বলছে। তাঁর এই বক্তব্য শেষ হতেই সভাস্থলে উপস্থিত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ হাততালি দিয়ে ওঠেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলার নাগরিকরা সকলেই ভারতবর্ষের নাগরিক। নবজাগরণ, স্বাধীনতা সংগ্রাম আমাদের এই অধিকার দিয়েছে। ভোট দেওয়া আমাদের অধিকার। ভোটাধিকার আছে মানেই আমরা নাগরিক। ১৮ বছরের ভাইবোনরা ভোটার তালিকায় নাম তুলবেন। জেনে রাখুন, এনআরসি করতে দেব না। এটা নিশ্চিত করে দিলাম। পাশাপাশি তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে সমালোচনার সুরে বলা হতো, বাংলা থেকে কেউ নোবেল পান না। বাংলায় নাকি বিজ্ঞানীও হয় না। এমন বক্তব্যের ঠিক তিনদিন পরই নোবেল পেল বাংলা। বর্তমানে বাংলায় নোবেল প্রাপকের সংখ্যা অন্য জায়গার তুলনায় বেশি। একদিন বাংলা বিশ্বসেরা হবেই। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ভারতে বেকার বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। কিন্তু রাজ্যে ৪০ শতাংশ বেকার কমিয়েছি।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, প্রতিবেশী রাজ্য অসমের এনআরসির প্রভাব সারা রাজ্যের মতো উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও পড়েছে। এই ইস্যুকেই হাতিয়ার করে বিজেপির বিরুদ্ধে ময়দানে ঝাঁপিয়েছে তৃণমূল। এদিনের সভায় মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও উজ্জীবিত। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা বুথস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সহ রাজ্যের একঝাঁক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন নিম্নমুখী। ভারতবর্ষের অর্থনীতির গ্রোথ ৮ শতাংশ থেকে নেমেছে ৬ শতাংশে। বাংলার অর্থনীতির গ্রোথ ১২.৫৮ শতাংশ। বাংলার সমাজ, অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে। সভায় বিনয় তামাং, জিটিএ’র চেয়ারম্যান অনীত থাপা, সংসদ সদস্য শান্তা ছেত্রী, এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান বিজয়চন্দ্র বর্মন, রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা, রাজ্য পুলিসের ডিজি বীরেন্দ্র, গ্রেটার নেতা বংশীবদন বর্মন উপস্থিত ছিলেন।