বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এদিকে, শুক্রবার মালদহ জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর ভগবানপুর গ্রামে মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। তিনি মৃতের পরিবারের হাতে ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন। জেলা তৃণমূল সভানেত্রী বলেন, নির্দোষদের যাতে পুলিস অযথা হয়রানি না করে তা দেখতে হবে। গ্রামবাসীরা দোষীদের শনাক্ত করতে পুলিসকে সাহায্য করবে। শনিবার আমি পুলিস সুপারের সঙ্গে দেখা করব। এব্যাপারে তাঁর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হবে। কালীপুজোর আগে এলাকায় পুলিসকে শান্তি বৈঠক করার জন্য বলা হবে।
পুলিস সুপার বলেন, ঘটনার রাতে জুয়াড়ি এবং মদ্যপরা পুলিস ফাঁড়িতে হামলা চালায়। ঘটনার সময় মোবাইল ক্যামেরায় তোলা কিছু ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। তাতে একজনকে ফাঁড়ির এক এএসআইকে পিছন থেকে মাথায় সজোরে আঘাত করতে দেখা গিয়েছে। কয়েকজনকে ফাঁড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরাতেও দেখা গিয়েছে। মৃতের আত্মীয় এক মহিলাকেও ভাঙচুর করতে দেখা গিয়েছে। চিহ্নিত ১০ জন পলাতক রয়েছে। তাদের পুলিস হন্যে হয়ে খুঁজছে। পুলিসি হয়রানির অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ গ্রামবাসীদের হয়রানি করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তাঁরা নির্বিঘ্নে গ্রামে থাকতে পারেন। তবে হামলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে আমরা ১৬জনকে গ্রেপ্তার করেছি। ফাঁড়ি ভাঙচুরে মদতদাতাদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৩ অক্টোবর রাতে লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে মিল্কি এলাকায় মদ ও জুয়ার আসর বসে। মিল্কি ফাঁড়ির পুলিস একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ পুলিস নিয়ামতপুর স্ট্যান্ড থেকে সাত জনকে গ্রেপ্তার করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। তাদের মধ্যে আইনুল ছিলেন। পুলিসের দাবি, ফাঁড়িতে আনার পর আইনুল বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। তাঁকে মিল্কি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পর শারিরীক অবস্থার অবনতি হয়। সেখান থেকে ধৃতকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এদিকে ততক্ষণে এলাকার কয়েকশো লোক ফাঁড়ি এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘিরে ফেলে। ফলে আইনুলকে সেখান থেকে বের করা সম্ভব হয়নি। মিল্কিতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে, মৃতের পরিবারের অভিযোগ, আইনুল স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকলেও জুয়া খেলেননি। পুলিস এবং সিভিক ভলান্টিয়াররা তাকে মিথ্যা অভিযোগে ধরে। তারপর পেটাতে পেটাতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তাতেই হৃদরোগী আইনুলের মৃত্যু হয়। যদিও পুলিস সুপার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখিয়ে দাবি করেন, মৃতের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জেলা পুলিসের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়। মিল্কি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরাও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাকেই মান্যতা দিয়েছেন।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। কংগ্রেস এবং তৃণমূল নেতানেত্রীরা পুলিসি হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা পুলিসকে একহাত নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিস ব্যর্থ হয় বলে তাদের অভিযোগ। ঘটনার রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। তারমধ্যে কেন ইংলিশবাজার থানা বা জেলা সদর থেকে বাহিনী মিল্কিতে পাঠানো হল না তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। এই অভিযোগকে অবশ্য পুলিস আমল দিতে চাইছে না।