বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, পতঙ্গবিদ, স্বাস্থ্যকর্মী, ভেক্টর কন্ট্রোল টিম প্রভৃতির রিপোর্টের ভিত্তিতে চরম বিপজ্জনক ওয়ার্ডের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মশার বংশ নিধন করতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাফাই অভিযানে জোর দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি পুরসভাকে জানানো হবে।
গত বর্ষার মরশুমে শিলিগুড়ি শহরে ডেঙ্গু থাবা বসায়। ওই সময় সমীক্ষা চালিয়ে স্বাস্থ্যদপ্তর কিছু ওয়ার্ডকে বিপজ্জন বলে চিহ্নিত করে। বর্ষার মরশুম শেষ হওয়ার পরও শহরে ডেঙ্গুর দাপট কমেনি। শীত শুরু হলেও কয়েকটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর দাপট বেড়েছে অস্বাভাবিক। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যদপ্তর শহরে ‘ক্রস সার্ভে’ চালিয়ে চারটি ওয়ার্ডকে ‘চরম বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করল।
গত বর্ষার মরশুমে অর্থাৎ জুন ও জুলাই মাসে শহরের ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টিকে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করা হয়। সেই তালিকায় ১-৬, ১০, ১৮, ২০, ২৪, ২৮, ৩৪-৩৭, ৪০-৪৬ নম্বর ওয়ার্ড ছিল। বিষয়টি পুরসভাকে জানানো হয়। বর্তমানে ডেঙ্গু মারাত্মকভাবে ছড়িয়েছে ২, ৩, ২১ এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এরমধ্যে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখানে এই সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত এই প্রথম। এই ওয়ার্ড স্বাস্থ্যদপ্তরের বিপজ্জনক তালিকাতেও ছিল না। বাকি তিনটি ওয়ার্ড অবশ্য বিপজ্জনক তালিকায় ছিল। ২ নম্বর ওয়ার্ডে সাতজন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১২ জন এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্তের খবর মিলেছে। ওসব ওয়াডের কিছু বাসিন্দা জ্বরে ভুগছেন।
স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ভার্নারেবল তালিকা প্রদানের পর পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল টিম ওয়ার্ডগুলিতে সচেতনতামূলক অভিযান চালায়। নিয়ম অনুসারে সিটিজেন টাস্ক ফোর্সও গড়ে। এরপরও ডেঙ্গু দমন না হওয়ায় শহরজুড়ে জ্বর নিয়ে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। যেসব ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী মিলেছে, সেসব ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্রস সার্ভে করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। পতঙ্গবিদরা মশার ঘনত্ব, লার্ভার বৈশিষ্ট, স্বাস্থ্যকর্মীরা জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা, নর্দমার পরিচ্ছন্নতা, বাড়ির নিকাশি ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ের উপর রিপোর্ট পেশ করেন। সেগুলি পর্যালোচনা করেই চরম বিপজ্জনক ওয়ার্ডের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ডেঙ্গু দমনে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলির উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। মশা নির্মূল করতে মাসে দু’বার করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের সচেতন করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এদিকে শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার হদিশ মিলেছে। স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছে, ওই ওয়ার্ডে বসানো লাইট ট্রাপ ফাঁদে ৪-৫টি পূর্ণবয়স্ক এডিস মশা ধরা পড়েছে। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার ৪, ১৪ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন করে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিন সংশ্লিষ্ট তিনটি ওয়ার্ডের কয়েকটি জায়গা থেকে লার্ভা সংগ্রহ করা হয়। পুরসভা ও স্বাস্থ্যদপ্তর লাগাতার সচেতনতামূলক এবং সাফাই অভিযান চালানোর পর এলাকাগুলিতে মশার উপদ্রব অব্যাহত থাকায় স্বাস্থ্যদপ্তরের একাংশ উদ্বিগ্ন। তাঁদের বক্তব্য, বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর ফ্ল্যাট ও বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। কিছু বাড়ি পরিত্যক্তও রয়েছে। সেসব বাড়ির আনাচে-কানাচে, শৌচাগারের প্যানে মশার আঁতুর ঘর থাকতে পারে, আশঙ্কা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। শিলিগুড়ি পুরসভার এক কর্তা বলেন, স্বাস্থ্যদপ্তরের পরামর্শ ও রিপোর্ট অনুসারেই মশার বংশ নির্মূল করতে এলাকায় এলাকায় অভিযানে নামা হয়েছে।