বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
পায়ে পায়ে নেতাজি সুভাষ রোড বরাবর এগিয়ে গেলে প্রথমেই পা রাখা যাবে কালীতলা ক্লাবে। মায়ের মূর্তি এখানে চিরন্তনী। রুচিশীলতার ছাপ স্পষ্ট মণ্ডপ জুড়ে। মা দুর্গার স্বামী মহাদেবের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসে সেজে উঠেছে মণ্ডপ। কালীতলা থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগোলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে দক্ষিণ বালুচর কল্যাণ সমিতির মণ্ডপে। গত বছর এক আদর্শ গ্রামের পরিমণ্ডল নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছিলেন উদ্যোক্তারা। এবার গ্রামের বদলে নিউ টাউনের মতো পরিকল্পিত আধুনিক শহরের দেখা মিলবে এখানে। এখান থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে গোলাপট্টি সর্বজনীন দুর্গাপুজো। শতবর্ষ অতিক্রম করে আসা এই পুজো আরম্ভ হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্যোগে। এবার এখানে দেখা মিলবে পুরীর বিখ্যাত মন্দিরের।
উত্তর ইংলিশবাজারের আরও যে পুজোগুলি চোখ টানবে তাদের মধ্যে রয়েছে শান্তিভারতী পরিষদ। রাণী পদ্মাবতীর বাসস্থান চিতোরগড়ের আদলে মণ্ডপ। সাবেকি মাতৃমূর্তি। আরেকটু এগিয়ে সর্বজয়ী ক্লাবের পরিবেশনায় মণ্ডপে উঠে এসেছে বেলুড় মঠ। নবদ্বীপের আলোকসজ্জার মধ্যেই থার্মোকলের কারুকার্যের মধ্যে চিরায়িত মাতৃমূর্তি। নারীশক্তির জয়গান দেখা যাবে অভিযাত্রী সঙ্ঘের মণ্ডপজুড়ে। কন্যা সন্তান যে মা-বাবার পাশাপাশি দেশেরও মুখ উজ্জ্বল করে তারই স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে এখানে। গয়েশপুর মঙ্গল সমিতির প্রতিমা এবার পৌরাণিকতার আবহে নির্মিত। কালীঘাটের মায়ের আদলে দশভূজার আদল এখানে। ভিন্ন স্বাদের এই নিবেদন মন কাড়বে অনেকেরই। মহানন্দাপল্লির সুকান্ত স্মৃতি সংঘ এবার মাতৃ আরাধনাকে সামনে রেখে গর্জে উঠেছে কন্যাভ্রুণ হত্যার বিরুদ্ধে। ‘মা আমায় বাঁচতে দাও’! এই আর্তি শোনা যাবে মণ্ডপে পা রাখলেই। কুতুবপুরের হিমালয় সঙ্ঘের থিম ‘নিরুদ্দেশের খোঁজে’। জীবনে বড় হয়ে ওঠার রাস্তায় হারিয়ে ফেলা বহু বিষয় এবার ফিরে আসবে এই ক্লাবের মণ্ডপে। বিবেকানন্দ পল্লির বিবেকানন্দ সংঘে এবার দেখা মিলবে মোমবাতি কারখানার। মণ্ডপসজ্জা থেকে শুরু করে এই পুজোজুড়ে শুধুই মোম। সর্বমঙ্গলাপল্লির রবীন্দ্র সঙ্ঘের আশ্বাস, এবার তাঁরা দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরবেন পুরানো মালদহ। এবার ঝংকার ক্লাবের পুজো শিবময়। রয়েছে প্রায় ২০ ফুট উঁচু শিবলিঙ্গ। অসংখ্য শিবমূর্তি’র মাঝে রয়েছে শিবপত্নী দুর্গা। হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্বাদ ফিরে পাওয়া যাবে বিনয় সরকার রোডের বেলতলা ক্লাবে। লাট্টু থেকে মার্বেল ছোটবেলার প্রিয় খেলাগুলির কথা মনে করাবে এই পূজা উদ্যোক্তারা।
এছাড়াও বরাবরের মতই মন কেড়ে নেবে তিতাস সংস্থার লণ্ঠনের আলোকসজ্জা ও সাবেকি প্রতিমা। রাজধানী ক্লাবের সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তাও উল্লেখযোগ্য। নেতাজি ক্লাব ও গ্রন্থাগারের মণিপুরী ধাঁচের প্রতিমা মানুষকে ভিন্ন স্বাদ দেবে। মাদুর দিয়ে তৈরি ইন্দু স্মৃতি সংঘের মণ্ডপ সজ্জা অভিনব। ৩ নম্বর কলোনির বিশ্বনাথ স্মৃতি সংঘের ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের উৎস হিসাবে দেখানো হয়েছে মা দুর্গাকে। অর্জুনের লক্ষ্যভেদ চোখে পড়বে সিঙ্গাতলা ক্লাবে। চণ্ডীকাব্যের রূপায়ণ দেখা যাবে বিবেকানন্দ ক্রীড়া চক্রে। শক্তিসঞ্চয় সংঘের মণ্ডপে ধানের শিসের ব্যবহার নজর কাড়বে। আমরা সবাই’র উদ্যোগে জল ছাড়া পৃথিবীর ভয়াবহ অবস্থা ফুটে উঠেছে মণ্ডপে।
তবে মালদহ রামকৃষ্ণ মিশনের দুর্গা পুজো নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার নিরিখে সব তুলনা ও বিচারের উর্দ্ধে বলেই দাবি আমজনতার। এখানে অন্তত একবার পা রাখতেই হবে।