সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় জটিলতা বৃদ্ধি। শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে। বিদ্যাশিক্ষায় বাধা-বিঘ্ন। হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য আফশোস বাড়তে ... বিশদ
নিম্ন অসমের চিরাং ও কোকরাঝাড় জেলায় ভয়াবহ সংঘর্ষের পর ২০১২ সালে সেখানকার বাসিন্দা কাশেম আলি ও আলতাফ মিঁয়া পরিবার নিয়ে টোটোপাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোমিনপাড়ায় চলে আসেন। একইভাবে অসমের কার্বি আলং ও নলবাড়ি জেলায় জাতিদাঙ্গার শিকার হয়ে ১৯৭৯ সালে কোহিনুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙিতে পরিবার নিয়ে চলে আসেন রত্নেশ্বর ও সুবোধবাবুরা।
১৯৭৯ সালে আসা ডাঙিতে এখন অসমের শরণার্থী মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি। অন্যদিকে ২০১২ সালে আসা মোমিনপাড়ায় অসমের শরণার্থী পরিবারের সংখ্যা দেড়শোর মতো। ২০১২ সালে মোমিনপাড়ায় অসম থেকে আসা সংখ্যালঘু মানুষদের জন্য শরণার্থী শিবির খুলেছিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৎকালীন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব মোমিনপাড়ায় গিয়ে শরণার্থী শিবিরের তদারকি করেছিলেন।
রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় কাশেম সাহেবরা এখন মোমিনপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। একইভাবে ৪০ বছর আগে অসম থেকে আসা সুবোধবাবুরাও এখন ডাঙির স্থায়ী বাসিন্দা।
অসমে এনআরসির কথা তুলে কাশেম সাহেব বলেন, ভাগ্যিস সেই সময় অসম থেকে পালিয়ে এসেছিলাম। না হলে আজকে আমার বা আমার পরিবারের নামও এনআরসির তালিকায় থাকত না।
কাশেম আলি বা আলতাফ মিঁয়ারা বলেন, আর কোনও দিন অসমে যাব না। অসম সরকার ডাকলেও যাব না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা দিদি সেই সময় যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল তা কোনও দিন ভুলব না। এখানে আমরা রেশন কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও জমির পাট্টা পেয়েছি। কাশেম সাহেব আরও বলেন, আমরা তো ভারতেরই নাগরিক। তাহলে কেন আমাদের অসম থেকে আসতে হল?
১৯৭৯ এবং ১৯৮৩ সালে অসমে হয়েছিল ‘বাঙালি খেদাও’ আন্দোলন। এনআরসির তালিকা থেকে বাঙালিদের নাম বাদ দিয়ে সেই ঘটনার রেশ এখনও জারি রাখা হয়েছে বলে জানান সুবোধবাবুরা। অসমে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম। যার সিংহভাগই বাংলা ভাষী মানুষ।
সুবোধবাবুরা বলেন, ১৯৭৯ এবং ১৯৮৩ সালে বাঙালি খেদাও আন্দোলনের সময় কার্বি আলংয়ে আমাদের মতো অনেকেরই বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন আমার বয়স মাত্র ১৫ বছর। তাই বাধ্য হয়ে বাবা মা অন্য অনেকের মতো আমাদের নিয়ে পালিয়ে এসেছিল আলিপুরদুয়ারের ডাঙিতে। আমরা এখন পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা।
এদিকে এনআরসির জেরে অসম থেকে এখনও পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে কেউ আসেনি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। অন্যদিকে সোমবার রাতে ডাঙিতে তৃণমূলের দিদিকে বলো কর্মসূচি অনুষ্ঠানেও অসমের এনআরসি নিয়ে আলোচনা হয়।
সম্প্রতি জেলা পরিষদের সভাধিপতি শীলা দাস সরকার বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে এদিন পর্যন্ত অসম থেকে কেউ আসেননি। যে কোনও পরিস্থিতির জন্য আমরা তৈরি আছি। অসম থেকে কেউ এপাড়ে এলে কুমারগ্রামে তাঁদের আশ্রয়ের জন্য কোনও অসুবিধা হবে না। কুমারগ্রামে কমিউনিটি হল, পর্যাপ্ত পরিমাণ অব্যবহৃত সরকারি বিল্ডিং ও ফ্লাড শেল্টার আছে।