ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
শিশুটির বাবা মন্টু হালদার বলেন, জনমজুরি ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। শনিবার বিকালে মাঠে কাজ করতে গিয়েছিলাম। ওর মা কোকিলা হালদার সবাইকে রান্না খাবার খাইয়ে নিজে খেতে বসেছিল। রজনী আগেই খাওয়াদাওয়া সেরে আমার একটি পুরনো ধুতি নিয়ে বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে একটি আমগাছে দোলনা বানাতে যায়। ওর সঙ্গে তখন কেউ ছিল না। একা একা ছোট্ট ছেলেটি গাছের ডালে উঠে ধুতির একটি মাথা বেঁধেও ফেলেছিল। এরপর ধুতির অন্য মাথাটি বাঁধার জন্য সে গলায় জড়িয়ে রেখেছিল। সেটাই সর্বনাশের কারণ হল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রজনী আচমকাই হাত ফসকে ডাল থেকে পড়ে যায়। নীচে পড়লেও গলায় জড়ানো ধুতির ফাঁস আটকে যায়। স্থানীয়রা সেই দৃশ্য দেখেই ছুটে গিয়ে ওকে ফাঁসমুক্ত করে। আমিও খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। দ্রুত ছেলেকে ইটাহার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকরা দেখার পর প্রাথমিক চিকিৎসা করে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দেন। সন্ধ্যার দিকে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করি। তখনও ছেলে চিকিৎসায় ভালো সাড়া দিচ্ছিল। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হঠাৎ ছেলের শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। পরে চিকিৎসক এসে মৃত ঘোষণা করেন।
মাত্র ১১ বছর বয়সের তৃতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া এক কিশোর শনিবার বিকালে খেলার ছলে দোল খাওয়ার জন্য দোলনা বানাতে গিয়ে এমন মর্মান্তিক ঘটনা কেউই মেনে নিতে পারছেন না। তালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবেশী কালীচরণ ঘোষ বলেন, শৈশবের আনন্দ করতে গিয়ে এমন তরতাজা একটি প্রাণ চলে যাবে ভাবতেই পারছি না। রবিবার তালবাড়ি গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। সকলের মুখে একটাই আক্ষেপ,হাত ফসকে না পড়লে, সদা প্রাণ চঞ্চল ছেলেটিকে এভাবে অকালে প্রাণ হারাতে হতো না। মন্টু হালদার ও কোকিলা হালদারের পাঁচ ছেলে এক মেয়ে। রজনী ছিল তাঁদের পঞ্চম সন্তান। কোকিলাদেবী রজনীর মৃত্যুর খবর জানার পর শোকে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। প্রতিবেশীরা হালদার বাড়িতে ভিড় করেছেন কিন্তু কেউই সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।
মৃত কিশোরের বাবা মন্টুবাবু ছেলের কথা বলতে গিয়ে বারবার ডুকরে কেঁদে উঠছেন। তিনি বলেন, গতকাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির পর ছেলে চিকিৎসায় অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। পরে অবস্থার উন্নতি দেখে রাতে বাড়ির লোকদের পাঠিয়ে দিই। কিন্তু রাতের দিকে ছেলের অবস্থার অবনতি হয় ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ওই সময় একজন চিকিৎসক দেখলে হয়তো ছেলের মৃত্যু দেখতে হতো না। যদিও মন্টুবাবু ছেলের চিকিৎসায় গাফিলতির কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গলায় ফাঁস লেগে যাওয়ায় শিশুটির অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। হাসপাতালের চিকিৎসায় কোনও খামতি ছিল না।