কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
মাত্র ক’দিন আগেই প্রবল বৃষ্টিতে ডুয়ার্স ও তরাই অঞ্চলের অনেক জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তখন অসহনীয় গরমে জ্বলছিল গোটা দক্ষিণবঙ্গ। বর্ষাকালে এমন গরম আগে টের পায়নি দক্ষিণবঙ্গের মানুষও। ‘বিশ্ব উষ্ণায়নের কুপ্রভাব’ বলে নিজেদের স্তোক দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু গোটা উত্তরবঙ্গও যে দক্ষিণের মতো এমন গরমে কাবু হয়ে পড়বে তা ভাবতে পারেননি উত্তরের বাসিন্দারা। শিলিগুড়িতে প্রবীণদের বলতে শোনা গেল, এত গরম আগে কোনওদিন টের পাইনি। যে শিলিগুড়ি বা উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি দু’দিন গরমের পর অকৃপণ হাতে ভারী বৃষ্টি দিয়ে বাতাস শীতল করেছে, সেই শিলিগুড়িতেও গত কয়েকদিন ধরে হাঁসফাঁস করছেন বাসিন্দারা। আর এই সুযোগে দেদার বিক্রি হচ্ছে ঠান্ডি মেশিন।
জলপাইগুড়িতে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেল, সাধারণভাবে উত্তরবঙ্গে এসময় তাপমানযন্ত্রের পারদ এতটা ঊর্ধ্বমুখী থাকে না। গত কয়েকদিন ধরেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ঘোরা ফেরা করছে। শিলিগুড়িতে তা আরও একটু বেশি। আবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও অনেকটা ওপরের দিকে। ফলে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ফারাক কমে গিয়েছে। সঙ্গে বাতাসে জ্বলীয় বাষ্পের আধিক্য। অতএব গরমে কাহিল অবস্থা। এইসঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পানীয় জলের সঙ্কটে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। বৃষ্টির অভাবে বিভিন্ন জেলায় চাষের জমি ফুটিফাটা। কোথাও লাগানো ধান শুকিয়ে গিয়েছে, কোথাও ধান লাগানোই যায়নি। সাম্প্রতিক অতীতে উত্তরবঙ্গের মানুষ এমন অবস্থা পড়েননি বলেই প্রবীণরা জানিয়েছেন।
গতমাসে লাগাতার দিন দুই তিনের ভারী বৃষ্টির পর আর সেভাবে প্রবল বৃষ্টি হয়নি উত্তরবঙ্গের কোথাও। বিক্ষিপ্তভাবে এলাকা ভিত্তিক কোথাও হালকা কোথাও মাঝারি বৃষ্টি হলেও গরম কমেনি। শুক্রবার মালদহের উত্তর অংশে কিছুটা, সদর এলাকায় শনিবার হালকা বৃষ্টি হয়েছে। এদিন রায়গঞ্জেও হালকা বূষ্টি হয়েছে। তাতে মালদহের প্রকৃতি একটু শীতল হলেও রায়গঞ্জে গরম কমেনি। সঙ্গে দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাকাল হয়েছে সাধারণ মানুষ। শিলিগুড়িতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৬ ও ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু গরম অনুভব হয়েছে ৪২ ডিগ্রির মতো। কোচবিহারে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন ছিল ২৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টি নেই। গা জ্বলে যাওয়া গরমে হাঁসফাঁস করছে গোটা জেলা। শ্রাবণের শেষে এসেও এমন বৃষ্টির আকাল কোচবিহারের মানুষ দেখেনি।
শিলিগুড়িতে ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নর্থবেঙ্গল (ফোসিন) সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলছিলেন, শিলিগুড়িতে আমরা এতটা গরম কোনও দিন টের পাইনি। এই গরম নাকি আরও বাড়বে। তাহলে কী অবস্থা হবে? এই গরমের জন্য এসির চাহিদা বিপুলভাবে বেড়ে গিয়েছে।
তবে এই দুরবস্থার মধ্যেও খুব একটা আশার বাণী শোনাতে পারেনি আবহাওয়া দপ্তর। জলপাইগুড়িতে আবহাওয়া দপ্তরের উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, সত্যি এই সময় গরম অত্যধিক। গত কয়েকদিন ধরে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ঘোরা ফেরা করছে। ভারী বৃষ্টির জন্য বাতাসে যে অস্থিরতা দরকার হয় এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গে তা নেই। এজন্য দরকার হয় নিম্নচাপ অক্ষরেখা বা ঘূর্ণাবর্তর সক্রিয়তা যাতে বাতাসে অস্থিরতা তৈরি হয়। এই মুহূর্তে দক্ষিণবঙ্গে গাঙ্গেয় উপত্যকায় তা কিছুটা সক্রিয় হলেও উত্তরবঙ্গে নয়। পাহাড়ে বৃষ্টি হলেও আগামী দু’তিন দিনে তরাই, ডুয়ার্স বা উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর কিংবা মালদহে ভারী বৃষ্টির সম্ভবনা নেই। এলাকা ভিত্তিক বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হতে পারে। হালকা মেঘের আনাগোনা থাকলেও ভ্যাপসা গরম কমবে না।