সংবাদদাতা, মালদহ: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের বিধায়ক প্রতিনিধি দলের বক্তব্য ও দাবিদাওয়া মনোযোগ সহকারে শোনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে মালদহের জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কক্ষে গিয়ে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন মালদহের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের পাঁচজন বিধায়ক। শুধুমাত্র চাঁচলের বিধায়ক আসিফ মেহেবুব ছাড়া বাকি কংগ্রেস বিধায়ক মোস্তাক আলম, ঈশা খান চৌধুরি, আল বিরুণী জুলকারনাইন, মোত্তাকিন আলম ও অর্জুন হালদার ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানও ছিলেন।
হরিশ্চন্দ্রপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মোস্তাক আলম বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠকে আমরা বেশকিছু বিষয় উত্থাপন করেছিলাম। সবগুলিই ধৈর্য সহকারে শুনেছেন তিনি। কিছু প্রশ্নও করেছেন। কিছু বিষয়ে তাঁর নিজস্ব মতামতও জানিয়েছেন। সংক্ষিপ্ত হলেও বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মোস্তাক সাহেব।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বৈষ্ণবনগরে পিটিয়ে মারা হয়েছে সানাউল শেখ নামে এক যুবককে। মোটর সাইকেল চোর অপবাদ দিয়ে ওই যুবককে গণধোলাই দেওয়া হয় ২৬ জুন। পরে কলকাতায় ২৮ জুন তার মৃত্যু হয়। রাজ্যে এই ধরণের গণপিটুনির কালচার বাঞ্ছিত নয়। মুখ্যমন্ত্রীকে তা জানিয়েওছি।
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার মৃত সানাউল শেখের পরিবারের হাতে দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ তুলে দিয়েছে। এই জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা ধন্যবাদও জানিয়েছেন বলে জানান কংগ্রেসের জেলা সভাপতি। ওই পরিবারের এক সদস্যের জন্য অন্তত একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধও মুখ্যমন্ত্রীকে করা হলে তিনি বিষয়টি সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিবেচনার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান মোস্তাক সাহেব।
একই সঙ্গে ওই গণপিটুনির ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী সদর্থক পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি দাবি করেন, সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের একজনকে আইন অনুযায়ী সরকারি চাকরির বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে। এই বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আশ্বাস রাজ্য সরকারের প্রধানের কাছ থেকে মিলেছে বলে দাবি মালদহের কংগ্রেস বিধায়কদের।
মোস্তাক আলম বলেন, আমি মালদহ জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি থাকাকালীন রাজ্য সরকারের প্রদেয় অর্থে গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য সহায়ক কর্মীদের বসার জন্য আলাদা অফিস বানিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেগুলির বেশিরভাগই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকছে। সরকারি সম্পত্তি এইভাবে পড়ে পড়ে নষ্ট হওয়া মানা যায় না। এই বিষয়টিও আমরা মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে নিয়ে এসেছি।
কংগ্রেস বিধায়ক দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে তারা জানিয়ে এসেছে তারা সর্ব শক্তি দিয়ে বিজেপি’র মতো সাম্প্রদায়িক দলের বিরুদ্ধে এই রাজ্যে লড়াই করছে। রাজ্য সরকার ও শাসক তৃণমূল নিজেদের ভূমিকা পালন করুক। তবে কংগ্রেস এই রাজ্যে দায়িত্বশীল বিরোধীর ভূমিকা পালন করবে সেই কথাও মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।
মোস্তাক আলম বলেন, কংগ্রেসের বিধায়করা বেশকিছু বিষয় মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি জানিয়েছে। তিনি বেশকিছু বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন আবার কিছু বিষয় নিয়ে দ্রুত নির্দেশও দিয়েছেন। আমরা বিরোধী দল। কিন্তু প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে তিনি যা ভূমিকা পালন করেছেন তাতে আমরা খুশি।