বিএনএ, রায়গঞ্জ: বেহাল রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শুরু করে বুধবার দুপুর পর্যন্ত রায়গঞ্জের মারাইকুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামপুরে বিক্ষোভ, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ, পঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন চলে। দীর্ঘ দিন ধরে মাত্র ৮০০ মিটার রাস্তা সারানো হচ্ছে না। রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়ে রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বার বার এবিষয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। মঙ্গলবার রাতে এলাকার এক ব্যক্তিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে খারাপ রাস্তায় তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। এরপরেই স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রায়গঞ্জ থানার পুলিস গেলে পুলিসকেও গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। এলাকায় রাতভর বিক্ষোভ চলতে থাকে। সকালে তার মাত্রা বাড়ে। জায়গায় জায়গায় বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকে দেওয়া হয়। দুপুরে রায়গঞ্জের বিডিও রাজু লামা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের তালাও খুলে দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারী স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ সরকার বলেন, শ্যামপুরের এই রাস্তাটি দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে। রাস্তায় বড় বড় গর্ত। বৃষ্টি হলে সেগুলিতে জল জমে যায়। বহু দুর্ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার রাতে এক রোগীকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। এরপরেই গ্রামবাসীরা এক জোট হয়ে আন্দোলনে নামেন। বুধবারও রাস্তা অবরোধ চলে। পঞ্চায়েত অফিসেও তালা ঝুলিয়ে দেয় গ্রামবাসীরা। পরে রায়গঞ্জের বিডিও এসে রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। পঞ্চায়েত অফিসের তালাও খুলে দেওয়া হয়।
রায়গঞ্জের বিডিও রাজু লামা বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি আমি জেলা পরিষদকে জানাব। জেলা পরিষদের পরিষদীয় দল নেতা তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ণেন্দু দে বলেন, ওই রাস্তার কাজের জন্য বরাদ্দ ধরা আছে। বৃহস্পতিবারই এস্টিমেটের কাজ শুরু হবে। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি করা হবে। মারাইকুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূল কংগ্রেসের কমল দেবশর্মা বলেন, রাস্তাটি জেলা পরিষদের। রাস্তাটি দীর্ঘ দিন ধরেই বেহাল রয়েছে। গ্রামবাসীদের আন্দোলন ন্যায্য। শুনেছি জেলা পরিষদ উদ্যোগ নিচ্ছে।
রায়গঞ্জের শ্যামপুরের ওই রাস্তাটি দিয়ে আশাপাশের কমপক্ষে ২০টি গ্রামের বাসিন্দা যাতায়াত করেন। মারাইকুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশাপাশি ইটাহারের সুরুণ-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বহু মানুষ রায়গঞ্জে আসেন ওই রাস্তা দিয়েই। এছাড়াও রায়গঞ্জের সঙ্গে বিহারের সংযোগস্থলও ওই রাস্তাটি। ফলে টেনহরি, অভোর, পদ্মপুকুর, গুরাহার, বিষাহার, রুদ্রখণ্ড, এলেঙ্গিয়া, বালিজোল, নুরিপুকুর, কোটাহার, কেওটাল, সুরুণ এলাকার মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। ওই রাস্তা দিয়েই স্থানীয় মহারাজা জগদীশনাথ হাইস্কুল, হাতিয়া হাইস্কুল, কৈলাশচন্দ্র রাধারানি বিদ্যাপীঠ, বালিজোল হাইস্কুল সহ আরও বিভিন্ন স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের যেতে হয়। ওই সব গ্রামের মানুষকেও শ্যামপুরের ওই রাস্তাটি ব্যবহার করেই রায়গঞ্জ শহরে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটির ওই অংশে কিছুটা দুরে দুরেই বড় বড় গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। সেই সব গর্ত পার হয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বেশ কয়েক জনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।