দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা: বাংলাদেশকে ‘ট্রানজিট’ করে এদেশে জাল নোট পাচার। আর সেই সিন্ডিকেটে জড়িয়ে ঢাকার পাকিস্তানি দূতাবাসের কয়েকজন কর্মী! এমন একটা তথ্য হাতে পাওয়া মাত্র নড়েচড়ে বসেছে এনআইএ। ঢাকায় পাকিস্তানি দূতাবাসের ছ’জন কর্মী এসে গিয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের ‘স্ক্যানারে’। এই তালিকায় রয়েছে ‘ডিফেন্স অ্যাডভাইজার’ ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদার এক আধিকারিকও। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিয়া) মাধ্যমে ‘কূটনৈতিক ট্যাগ’ লাগানো কার্গো কনসাইনমেন্টে এরাই আকাশপথে জাল নোট উড়িয়ে আনছে বলে অভিযোগ। আর করাচি থেকে শ্রীলঙ্কা হয়ে জলপথে চট্টগ্রাম বন্দরে ভারতীয় জাল নোটের কনসাইনমেন্ট পাঠানোর দায়িত্বে রয়েছে আইএসআই এবং দাউদের ভাই আনিস ইব্রাহিম। চলতি বছরের গত সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার পল্টন মডেল থানা এবং গত নভেম্বর মাসে খিলখেত থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় আট কোটি টাকার ভারতীয় জাল নোটের কনসাইনমেন্ট জলপথেই ভারতে পাঠিয়েছিল ডি কোম্পানি।
এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পঙ্গু করার এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে কাগজে কলমে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই তদন্তেই উঠে আসছে পাক দূতাবাসের কর্মীদের একাংশ এবং আইএসআই-ডি কোম্পানির চক্রান্ত। এরই মধ্যে গত ২৬ নভেম্বর ঢাকার খিলখেত থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে ৭.৩৫ কোটি টাকার ভারতীয় জাল নোট। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ডি কোম্পানির এক মহিলা এজেন্ট ফতেমা আখতার অপিকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসেই সেই জাল নোট উদ্ধারের তদন্তে বাংলাদেশ যাবে এনআইএর টিম। ২০১৯ সালে এনআইএ অ্যাক্টে সংশোধনীর পর বাংলাদেশই হবে সংস্থার তৃতীয় আন্তর্জাতিক তদন্তস্থল। ২০২০ সালে কাবুল এবং লন্ডনের দু’টি ঘটনার তদন্তভার নিয়েছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঢাকার খিলখেত থানায় জাল নোট উদ্ধারের যে মামলাটি (কেস নম্বর ৩৯/২০২১) শুরু হয়েছে, সেই বিষয়ে ঢাকা পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ওই মামলায় ফতেমা নামে যে মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এনআইএর তথ্য ভাণ্ডারে তার অস্তিত্ব রয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, বাংলাদেশি এই মহিলার স্বামী মহম্মদ দানিশ, ডি কোম্পানির জাল নোট কারবারের অপারেটর। পাকিস্তানি নাগরিক দানিশ করাচির বাসিন্দা। ঘনঘন বাংলাদেশ যাতায়াত করে। গত ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকার মতিঝিল থানার মৌচাক এলাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকার ভারতীয় জাল নোট সমেত ধরা পড়েছিল সে, তার স্ত্রী ফতেমা এবং অপর এক পাক নাগরিক সাব্বির। তদন্তে জানা যায়, সেই জাল নোট বাংলাদেশে আনার ক্ষেত্রে পাক দূতাবাসের কয়েকজন কর্মীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এবার কোটি কোটি টাকার জাল নোট ফতেমার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়ার পর আইএসআই নেটওয়ার্ক, পাক দূতাবাস কর্মীদের একাংশ এবং ডি কোম্পানির ভূমিকা সামনে এসেছে। আর তাই ঘুঁটি সাজাচ্ছে এনআইএ-ও।