কাবুল: মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে হিন্দুকুশ পর্বত। তার কোলে এতদিন মাথা উঁচু করেই দাড়িয়েছিল পঞ্জশির। আহমেদ মাসুদ ও তাঁর ন্যাশনাল রেজিস্টেন্স ফ্রন্ট (এনআরএফ)। সোমবার তালিবান দাবি করল, শেষ ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ পঞ্জশিরও তাদের দখলে চলে এসেছে। গোটা আফগানিস্তানই এখন তালিব বাহিনীর কব্জায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পঞ্জশিরের গভর্নরের দপ্তরে তালিবান যোদ্ধারা। তবে, তালিবানের এই দাবির মধ্যেই সামনে এসেছে এনআরএফ-এর একটি ট্যুইট। সেখানে পাল্টা দাবি করা হয়, ‘পঞ্জশিরের প্রধান রাস্তা তালিবানের দখলে এসেছে ঠিকই। কিন্তু কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপত্যকার বিভিন্ন স্থান তাদের হাতেই রয়েছে। যুদ্ধ এখনও থামেনি।’ এই দাবির মধ্যেই এনআরএফ অবশ্য মেনে নিয়েছে, তালিবানের সঙ্গে যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে প্রতিরোধ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জেনারেল আব্দুল উদদ জারার। জেনারেল জারা হলেন আহমেদ মাসুদের ভাইপো। মৃত্যু হয়েছে এনআরএফ-এর মুখপাত্র ফাহিম দাস্তিরও। পঞ্জশিরের লড়াইয়ে তালিবানকে পাকিস্তান যে সরাসরি সাহায্য করছে, ফের সেই প্রমাণ সামনে চলে এল। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পঞ্জশিরের উপর চক্কর কাটছে পাক বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান। এনআরএফ নেতা মাসুদেরও দাবি, পাকিস্তানের ফাইটার জেটগুলি থেকে বোমাবর্ষণ চলছে। তবে, শরীরে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়াই চলবে। এবিষয়ে ১৯ মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। প্রতিরোধ বাহিনীর দাবি, পাকিস্তানের বোমাতেই ফাহিমের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে মাসুদের পরিবারের বহু সদস্যেরও। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর, প্রতিরোধ শিবিরের নেতা তথা প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালেকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিন কাবুলে এক সাংবাদিক বৈঠকে তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ দাবি করেন, পঞ্জশিরের দখল সম্পূর্ণ। সেখানে তালিবানের পতাকা উঠেছে। এই জয়ের মাধ্যমেই আমাদের দেশ পুরোপুরি যুদ্ধমুক্ত হল। বিচ্ছিন্নতাবাদের আর কোনও চেষ্টা আমরা বরদাস্ত করব না। ফের কেউ এধরনের চেষ্টা করলে আমরা প্রবল আঘাত হানব। ইসলামি আমিরশাহি বিচ্ছিন্নতাবাদের ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল। তালিবান বাহিনী যে বড় ধাক্কা দিয়েছে, গতকালই কার্যত তা মেনে নিয়েছিল এনআরএফ। সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল মাসুদ শিবির। বলেছিল, তালিবান বাহিনী যদি পঞ্জশির থেকে ফিরে যায় তাহলে আলোচনায় বসতে তারা প্রস্তুত। তবে, পঞ্জশির উপত্যকায় মাসুদের প্রস্তাব মেনে তালিবান যে সংঘর্ষ বিরতিতে যাবে না, তা স্পষ্ট হতে বেশি সময় লাগেনি। ফাহিম দাস্তির মৃত্যুর খবর আসার পর ফেসবুক পেজে শোকপ্রকাশ করেন আহমেদ মাসুদ। তিনি লেখন, ‘ফাহিম দাস্তি ছিলেন আমার বন্ধু ও ভাই। তিনি সর্বদা নিজের মতাদর্শ ও মানুষের বাক স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। মাতৃভূমির জন্য একজন নায়কের মতোই প্রাণ দিয়েছেন তিনি।’ তালিবানের পঞ্জশির দখলের পরেই প্রশ্ন উঠেছে মাসুদ ও সালে কোথায় রয়েছেন? তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ সোমবার বলেছেন, ওই দু’জনই তাজিকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছেন। মাসুদ নিজে এদিন ট্যুইটারে লিখেছেন, তাঁরা নিরপাদে রয়েছেন। কিন্তু কোথায় রয়েছেন, সে ব্যাপাকে কোনও মন্তব্য করেননি।