বেজিং: লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই তিব্বতের ‘সুইজারল্যান্ড’ নিয়ংচি সফরে এলেন চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং। আপাতদৃষ্টিতে তাঁর এই সফরসূচি নয়াং নদীর উপর একটি সেতু পরিদর্শন। কিন্তু এর পিছনে গভীর রাজনৈতিক কৌশলের গন্ধ পাচ্ছেন কূটনীতির বিশেষজ্ঞরা। কারণ, নিয়ংচি শহরের ভৌগোলিকগত অবস্থান একেবারে অরুণাচল সংলগ্ন। বেজিংয়ের দীর্ঘদিনের দাবি, অরুণাচল আসলে দক্ষিণ তিব্বতেরই অংশ। আর এই ইস্যুতে আজও চীন-ভারতের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ৩ হাজার ৪৮৮ কিমির  সীমান্ত-সঙ্কট মিটমাট হয়নি। তবে, দিল্লির সাউথ ব্লক বরাবরই  চীনের দাবিকে অসা‌র প্রতিপন্ন করে এসেছে। তা সত্বেও ‘গা জোয়ারি’ অবস্থান থেকে একচুলও নড়েনি  বেজিং। নিয়ংচি সফর করে জিনপিং সেই অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করে দিলেন বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। সেই কারণেই বোধহয় শুক্রবার পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের সফর যতটা সম্ভব আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। শেষমেষ তা আর সম্ভব হয়নি। প্রকাশ্যে চলে জিনপিংয়ের এই সফরসূচি। 
বুধবার নিয়ংচি মেইনলিং বিমানবন্দরে নামেন জিনপিং। সম্ভবত, এই প্রথম তাঁর অরুণাচলের পড়শি শহরে সফর। বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে  দেখা গিয়েছে তিব্বতের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের। হাজির ছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক পদাধিকারী ব্যক্তিও। উপস্থিত জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে জিনপিংয়ের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য—‘তিব্বতের মানুষ সুখী জীবন-যাপনের প্রতি অগ্রসর হবেন, সেটাই আমার বড় প্রাপ্তি এবং আত্মবিশ্বাসও। 
জিনপিংয়ের নিয়ংচি সফর শুধুমাত্র ‘ভৌগোলিক রাজনৈতিক’ কৌশলের অঙ্গ নয়। সফরের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ব্রহ্মপুত্রের জল-কূটনীতিও। চলতি বছরে চতুর্দশতম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সেখানে ব্রহ্মপুত্রের উপর একাধিক বাঁধ নির্মাণে ছাড়পত্র দিয়েছে বেজিং। তাতে বেজায় ক্ষুব্ধ ভারত ও বাংলাদেশ। ব্রহ্মপুত্রের জলে চীনের এই দখলদারিতে উদ্বিগ্ন দুই দেশ। সেতু পরিদর্শন করে জিনপিং আসলে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নে কৌশলগত পদক্ষেপ করতে পারেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।