কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। ২০১৯ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাস। বালাকোটে বিমানহানার পর দু’দেশের সেনা জড়িয়ে পড়ে আকাশ-যুদ্ধে। সেই সময় অভিনন্দনের মিগ-২১ ভেঙে পড়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। তাঁকে ‘যুদ্ধবন্দি’ করে পাক সেনা। তাঁর প্রত্যাবর্তন নিয়ে বুধবার পাকিস্তানের পার্লামেন্টে মুখ খোলেন বিরোধী দল পিএমএনএলের নেতা তথা এমপি আয়াজ সাদিক। রাখঢাক না করেই তিনি বলেন—‘অভিনন্দনকে ছাড়া না হলে পাকিস্তানের সেনাঘাঁটি উড়িয়ে দিত ভারতীয় বায়ুসেনা। আর সেই ভয়ে দরদর করে ঘামছিলেন সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া। তাঁর হাঁটু কাঁপছিল।’
জেনেবুঝেই হোক কিংবা বেফাঁস, সাদিকের এই মন্তব্যকে ঘিরে তুমুল ঝড় বয়ে যায় পাক পার্লামেন্টে। তোলপাড় শুরু হয় সে দেশের সংবাদ মাধ্যমেও। বিড়ম্বনায় পড়ে শাসকদল সহ সেনাবাহিনী। মুখ বাঁচাতে পুলওয়ামার নাশকতাকে ইমরান সরকারের ‘সাফল্য’ বলে সংসদেই উল্লেখ করেন মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী। অর্থাৎ, পাকিস্তান স্বীকার করে নিল, পুলওয়ামা হামলায় মদত ছিল ইমরান সরকারেরই। মওকা বুঝে অভিনন্দন ইস্যুকে লুফে নেয় ভারতও। কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে মাঠে নেমে পড়ে বিজেপি। পাকিস্তানের এই ‘স্বীকারোক্তি’র অস্ত্রে শান দিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা একঝাঁক ট্যুইট করেন। তাঁর নিশানায় ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘ভারতের শক্তির উপর কোনও ভরসাই নেই যুবরাজের। তা সে দেশের সেনাবাহিনীই হোক কিংবা সরকার। এবার অন্তত বন্ধু পাকিস্তানের কথা বিশ্বাস করবেন ওঁরা।’ প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান বি এস ধানোয়াও এদিন বলেছেন, ‘ভারতের সেনাশক্তির আঁচ তাঁরা (পাক সেনা) পেয়েছিলেন। বুঝেছিলেন, ভারত পাক সেনাঘাঁটি উড়িয়ে দিতে পারে।’
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সে দেশের বিরোধী দলগুলির তিক্ততা এখন প্রকাশ্যে। তা নিয়ে ভীষণ চাপের মুখে ইমরানের সরকার। এই পরিস্থিতিতে সে দেশের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে সাদিকের পাক সেনাবাহিনীর মুখোশ খুলে দেওয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। অভিনন্দনের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ঠিক কী বলেছেন পিএমএনএলের এমপি? দু’দেশের দীর্ঘ চাপানউতোরের পর মুক্তি পান ভারতের উইং কমান্ডার। সেই সূত্র ধরে পাক সংসদে সাদিকের দাবি, ‘অভিনন্দনের মুক্তির আগে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে লাগাতার বৈঠক চলে। এমনই এক বৈঠক বসে পার্লামেন্টে। বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির ডাকা ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অবশ্য ছিলেন না। তবে পার্লামেন্টের ওই ঘরে সেনাপ্রধান বাজওয়া ঢুকতেই তাঁরা চমকে যান। ভয়ে বাজওয়া পুরো ঘেমে গিয়েছিলেন। এমনকী তাঁর পা-ও কাঁপছিল।’ এরপরই সবাইকে অবাক করে সাদিক বলেন, ‘ওই বৈঠকে কুরেশিও সেনাপ্রধানকে উদ্দেশ করে জানিয়ে দেন, অভিনন্দনকে দ্রুত মুক্তি দিন। তা না হলে রাত ৯টার মধ্যে ভারত হামলা চালাবে।’ অকপটে সাদিক এও স্বীকার করেছেন, ‘অভিনন্দন ইস্যুতে ইমরান সরকারকে সমর্থন করেছিল বিরোধী দল।’ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন ফাওয়াদ। সংসদে তিনি বলেন, ‘ইমরান খানের নেতৃত্বে পুলওয়ামা আমাদের সাফল্য। আমরা ভারতের ভিতরে ঢুকে আঘাত করেছি।’ পুলওয়ামার বদলা নিতেই বালাকোটে বিমানহানা চালায় ভারত। এতদিন তার দায় নিতে অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। এবার তাতে ‘সিলমোহর’ দেওয়ায় কংগ্রেসকে নিশানা করতে তেড়েফুঁড়ে ওঠে বিজেপি। এদিন নাড্ডা বলেছেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীকে ছোট করে লাগাতার প্রচার চালিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। আধুনিক রাফাল বিমান যাতে ভারত না পায়, তা নিশ্চিত করতে ওরা সেনাবহিনীর যোগ্যতা নিয়ে মজা করে গিয়েছে।’