বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
শেক্সপিয়রের সেই ‘ভেরোনা’ আজ আর নেই। বদলে গিয়েছে অনেককিছুই। শুধু বদলায়নি ‘রোমিও’, ‘জুলিয়েট’রা! ভেঙে পড়েনি ‘ব্যালকনি’ও! তা না হলে কোভিড মহামারীকে সাক্ষী রেখে গোটা বিশ্বকে ফের ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে তুলতে পারে ভেরোনা? ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আজও প্রথম দর্শনে প্রেম হয় এই শহরে! দু’জনের অপলক চেয়ে থাকার মধ্যে জন্ম নেয় গভীর অনুরাগ!
মার্চ মাসের এক সন্ধ্যা। শুনসান ভেরোনার রাস্তা। সাইরেন বাজিয়ে ছুটছে একটার পর একটা অ্যাম্বুল্যান্স। শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাটের ব্যালকনির বাইরে এসে দাঁড়ালেন মাইকেল। পুরো নাম মাইকেল ডি’আলপাওস। মুখোমুখি ফ্ল্যাটে থাকেন পাওলা। সুবেশা তরুণী। কোভিড সংক্রমণের ভয়ে প্রতিটি ফ্ল্যাটের দরজায় খিল। একটু মুক্ত বাতাসের খোঁজে পাওলাও দাঁড়িয়ে তাঁর ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে। পাওলার চোখে চোখ মাইকেলের। সেই প্রথম সাক্ষাৎ। দু’জনের নিষ্পলক তাকিয়ে থাকা। মুখে হাল্কা হাসি। মহামারীর ভেরোনায় যেন ‘রোমিও’ এবং ‘জুলিয়েট’! সেদিনের সন্ধ্যায় ‘ঘটনা’ বলতে এটুকুই। কিন্তু পাওলা ও মাইকেল দু’জনেই বুঝে যান, এটা নিছক মুহূর্তের ভালো লাগা নয়। নিশ্চিতভাবে ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’। এরপর দিন গড়ায়। প্রেম আরও গভীর হয়। শেষমেশ একসঙ্গে পথ চলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তাঁরা।
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ওই অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন পাওলা। কিন্তু মজার বিষয়, সেদিনের আগে পর্যন্ত একে অপরের অস্ত্বিত্বটুকু জানতেন না কেউই। ভেরোনার ব্যস্ত জীবন। দম ফেলার ফুরসৎ ছিল না কারও। লকডাউনে সন্ধ্যার অবসরই পরিচয় করিয়ে দিল মাইকেল-পাওলাকে। প্রথম দেখার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মাইকেলের স্বীকারোক্তি, ‘আমি পাওলার সৌন্দর্য আর হাসিতে বুঁদ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই সময় ওঁর নাম জানতাম না। পাওলা সম্পর্কে আমার বোন কিছু কথা বলে। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ওঁর খোঁজ শুরু করি।’
শিঁকে ছিঁড়তে অবশ্য দেরি হয়নি। ইন্সটাগ্রামে মনের মানুষকে খুঁজে পান মাইকেল। প্রথমে মেসেজ বক্সে। তারপর ফোনে কথাবার্তা। রাত গড়িয়ে ভোর। দু’জনের খেয়ালই নেই ব্যালকনিতে ঠিকরে পড়ছে সূর্যের আলো! তবে, শুধু ফোনালাপে কি আর আশ মেটে! মুখোমুখি দেখা করার ইচ্ছেও যে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কিন্তু ফ্ল্যাটের বাইরে থাবা উঁচিয়ে করোনা। সঙ্গে সরকারি নির্দেশিকা—‘একদম বাড়ির বাইরে নয়।’ ‘ডেটে’ যাওয়া তো দূর অস্ত! তা হলে উপায়? পাওলা আর মাইকেল দু’জনেই ঠিক করেন ফ্ল্যাটের সেই একচিলতে ব্যালকনিকেই তাঁরা গড়ে তুলবেন ভালোবাসার মঞ্চ। একদিন প্রেমিকাকে অবাক করে মাইকেল ব্যালকনিতে মেলে ধরেন চাদর। তাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘পাওলা’! তার পর আর লুকোছাপার কিছু নেই। গোটা দুনিয়া জেনে যায় নয়া প্রজন্মের রোমিও-জুলিয়েটের কথা। দুই ফ্ল্যাটের সামনে ভিড় জমে সাংবাদিকদের। পাওলা-মাইকেলের সাক্ষাৎকার নেন তাঁরা। এরই মধ্যে ধীরে ধীরে কমতে থাকে করোনার প্রকোপ। বাইরে বেরোনোয় নিষেধাজ্ঞা ওঠে। হাঁফ ছাড়েন দু’জনেই। কাছের একটি পার্কে দেখা করেন মাইকেল আর পাওলা। প্রথম দেখাতেই প্রথম চুম্বন। পার্কেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত। আপাতত তাঁরা নিজের নিজের ফ্ল্যাটে। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই জাঁকজমক বিয়ের অনুষ্ঠান। আয়োজনে এতটুকু ত্রুটি রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন পাওলা। তাঁর ইচ্ছে, বিয়ের মূল আয়োজন বিলাসবহুল রিসর্টে নয়। হবে একচিলতে সেই ব্যালকনিতেই। যেখানে দাঁড়িয়ে প্রথম মাইকেলের দিকে চেয়েছিলেন তিনি।
শেক্সপিয়রের রোমিও-জুলিয়েট নাটকের সেই ব্যালকনি থাক। আলোর রোশনাই ঝরে পড়ুক সেখানে। কিন্তু মাইকেল-পাওলার প্রেমকাহিনী বেঁচে থাক বিরহে নয়, মিলনের আনন্দে! কামনা বিশ্ববাসীর।