বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
রবিবার, ভারতীয় সময় তখন মধ্যরাত। দুই মহাকাশচারীর উপসাগরে অবতরণের সাক্ষী থাকলেন আমেরিকার মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। তামাম দুনিয়ার বিজ্ঞানী মহলও উপভোগ করল সেই দৃশ্য। ১৯৭৫ সালের ২৪ জুলাই। আমেরিকার মহাকাশযান শেষবারের মতো প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করেছিল। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে ৪৫ বছর। নাসার কোনও মহাকাশচারী ক্যাপসুলে মহাসাগরে অবতরণ করেননি। প্রত্যেকবারই তাঁদের অবতরণের ঠিকানা ছিল কাজাখস্তান। কিন্তু, বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা স্পেস এক্সের হাত ধরে ফের মহাকাশচারীদের জন্য মহাসাগরে অবতরণের পন্থা অবলম্বন করে নাসা। শেষ পর্যন্ত সফল হওয়ায় খুশি সব মহলই।
গত মে মাসে দুই মহাকাশচারী ডগ হার্লে (কমান্ডার) এবং বব বেনকেনকে নিয়ে বেসরকারি অভিযান হিসেবে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল স্পেস এক্স। টানা দু’ মাস আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে (আইএসএস) কাটিয়ে রবিবার তাঁরা পৃথিবীতে ফিরে এলেন। ২৪ ঘণ্টা আগে আইএসএস থেকে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। তখন মহাকাশযানের গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিমি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় গতিবেগ কমে হয় প্রতি ঘণ্টায় ৫৬০ কিমি। অবতরণের ঠিক আগের মুহূর্তে গতিবেগ একেবারে কমিয়ে আনা হয় ২৪ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। তার পরই প্যারাশ্যুটের সাহায্যে ক্যাপসুলকে মেক্সিকো উপসাগরে অবতরণ করানো হয়।
পেন্সাকোলা উপকূল থেকে ৪০ মাইল দূরে মেক্সিকো উপসাগর। চূড়ান্ত সতর্কতার সঙ্গে আগাম প্রস্তুতি নেওয়াই ছিল সেখানে। মহাকাশচারীদের উদ্ধারে তৈরি ছিলেন মার্কিন নৌসেনারা। তাঁদের সহযোগিতায় ক্যাপসুলকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হয়। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর খোলা হয় ক্যাপসুল। তার থেকে বেরিয়ে আসেন দুই নভশ্চর। সে এক খুশির মুহূর্ত! হার্লের কথায়, ‘এই মহাকাশ অভিযানে যেতে পেরে আমি অত্যন্ত আপ্লুত। তার চেয়েও বড় কথা আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে এত মানুষের উপস্থিতি দেখে আমি অভিভুত।’
হার্লের শিরা-উপশিরায় উত্তেজনার এই অনুভূতি তখন টের পাচ্ছেন আরও একজন। তিনি থমাস স্ট্যাফোর্ড। ১৯৭৫ সালে শেষবার প্রশান্ত মহাসাগরে ক্যাপসুলে অবতরণ করেছিলেন নাসার এই মহাকাশচারী। ফ্লোরিডার বাড়িতে বসে হার্লে-বেনকেনের অবতরণের পুরো দৃশ্যটাই দেখছিলেন টিভিতে। টানটান উত্তেজনা অনুভব করছিলেন তিনি। বলছিলেন, ‘৫০ বছর আগের দিনগুলি মনে পড়ে যাচ্ছে। সে দিনের সেই মুহূর্ত টাটকা হয়ে ফিরে এল আমার জীবনে।’ হাউস্টনের জনসন স্পেস সেন্টার থেকে গোটা প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করেন নাসার প্রধান অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম ব্রিডেনস্টাইন। তিনি জানিয়েছেন, এই প্রথম নাসা বেসরকারি একটা সংস্থার সঙ্গে মিলে একটা সফল অভিযান করল তাঁরা। এটা আগামীদিনে গোটা পৃথিবীর কাছে নয়া দিগন্ত খুলে দেবে। সফলভাবে-নিরাপদে নভোশ্চররা ফিরে আসার পর বিজ্ঞানী থেকে ইঞ্জিনিয়ার সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্যুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
নাসার একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসার পর দুই নভশ্চরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। হেলিকপ্টারে তাঁদের প্রথমে পেন্সাকোলা এবং পরে হাউস্টনে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নভশ্চররা নিজেদের বাড়িতে যান। দূর থেকে পরিবারের সঙ্গে দেখাও করেন। স্পেস এক্স জানিয়েছে, তাঁদের এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। মহাকাশে কাটিয়ে এলেও, তাঁদের কোভিডের পরীক্ষা করা হবে। স্পেস এক্স প্রধান এলন মাস্ক অভিযানের পর হাউস্টনে হার্লের বাড়িতে পৌঁছে যান। তিনি বলেন, ‘আমি ধার্মিক নই। তা হলেও সব কিছু যাতে ঠিকঠাকভাবে মিটে যায়,তারজন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম।’