ব্রিটেন: রক্ষাকর্তা নিজেই যখন করুণার পাত্র হয়ে যান, তখন সত্যি বিড়ম্বনার শেষ থাকে না! এক শতাব্দী ধরে মানুষকে উদ্ধার করেছে যারা, তাদেরই প্রতিনিধি কিনা শুয়ে আছে স্ট্রেচারে! ১৬ জনের উদ্ধারকারী দল তাকে ঘিরে ব্যতিব্যস্ত। বহাল তবিয়তে গা এলিয়ে থাকতে আরাম লাগছে বেশ। কিন্তু বিবেকের দংশন বলেও তো একটা বস্তু আছে! স্কাফেল পাইকের উপত্যকা বেয়ে নামার সময় তার জ্বালায় রীতিমতো অপ্রস্তুত ডেইজি। প্রকাণ্ড চেহারা। গা ভর্তি নরম সাদা-কালো লোম। গম্ভীর মুখে হাসির লেশমাত্র নেই। লটপটে কান বারকয়েক দুলিয়েই মনের ভাব প্রকাশ করে সে। কুকুরপ্রেমী যে কেউ এক লহমায় তাকিয়ে বলে উঠবে — সেন্ট বার্নার্ড ডগ! সাহসিকতা ও বীরত্বের মূর্তিমান পরাকাষ্ঠা। ভয়ঙ্কর তুষারঝড়। পথ হারিয়েছেন কোনও পর্বতারোহী। কিংবা আল্পসের দুর্গম গিরিখাতে নিখোঁজ একদল তরুণ অভিযাত্রী। খুঁজে পেতে শেষ ভরসা সেই সেন্ট বার্নার্ড! তীব্র ঘ্রাণশক্তি আর তীব্রতর সাহস। এই দুইয়ের বলে কত শত আরোহীকে নিশ্চিত মৃত্যুর কিনারা থেকে ফিরিয়ে এনেছে তারা। আজ শেষমেশ তাদেরই এক বংশধর কীনা এভাবে লেজ গুটিয়ে দয়ার দান পেতে নিল! নিজেকে বারবার দুয়ো দিয়ে চলেছিল ডেইজি।
কিন্তু এছাড়া অন্য কোনও উপায়ও তো ছিল না! পাহাড় থেকে নামার সময় পায়ে হঠাৎ হ্যাঁচকা টান অনুভব করে সে। সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়ে। কর্মঠ হলেও ডেইজি একইসঙ্গে আদুরে স্বভাবের কুকুর। খানিক খেয়ালিও বটে। একবার গোঁ ধরলে সহজে নড়ানো মুশকিল। বিলক্ষণ বুঝেছিলেন ডেইজির মালিক। একা হাতে আহত কুকুরকে এতটা পথ নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। এদিকে স্কাফেল পাইকের উপত্যকা বেয়ে দিনের আলো ক্রমশ মুছে আসছে। ভয় পেয়ে দ্রুত মাউন্টেন রেসকিউ টিম'কে ফোন করে খবর দেন তিনি। তড়িঘড়ি ছুটে আসে ১৬ জনের বিশেষ উদ্ধারকারী দল। কিন্তু কাজে নামতেই বিপত্তি। এতদিন বিপদে পড়া মানুষকে ফিরিয়ে এনেছেন তাঁরা। অথচ এবার তো আহত নিজেই স্ট্রেচারে উঠতে চাইছে না! ভারী শরীরখানা গুটিসুটি মেরে জেদ ধরে বসে রয়েছে সে। কিছুতেই মানুষের করুণা মাথা পেতে নেবে না। ফলে বাধ্য হয়ে শুরু হয় মানভঞ্জন পালা। ডেইজির রাগ ভাঙাতে রীতিমতো কালঘাম ছোটে উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের। অনেক আদর আর ভালোবাসার পর অবশেষে রাজি হয় সে। তারপর পাঁচ ঘণ্টা ধরে স্ট্রেচারে গা এলিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে শুয়ে থাকে ডেইজি। পথে পরে খরস্রোতা নদী। উঁচু-নীচু গিরিপথ। কিন্তু সেসব নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা ছিল না তার। অবশেষে সমতলে নামতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সকলে। মিশন সফল হয়েছে! সুস্থ শরীরেই ফেরানো গিয়েছে ডেইজিকে। স্ট্রেচারের বেল্ট খুলতেই উদ্ধারকারী দলের সাফল্যের হাসি আরও চওড়া হয়। গা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায় ডেইজি। বারকয়েক লেজ নাড়ায়। তারপর হাল্কা আওয়াজ তুলে কয়েক পা এগিয়ে সকলে জানান দেয় — এই তো দিব্যি আছে সে!