বিতর্ক-বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম-পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থোপার্জনের সুযোগ।প্রতিকার: অন্ধ ব্যক্তিকে সাদা ... বিশদ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু), ইউনাইটেড নেশনস চাইল্ড ফান্ড (ইউনিসেফ) সহ মোট পাঁচটি সংস্থা যৌথভাবে অপুষ্টি সংক্রান্ত এই রিপোর্ট তৈরি করে। গত দশ বছর ধরে বিশ্বের মানচিত্রে খাদ্যের বণ্টন, নারী স্বাস্থ্য, শিশু সুরক্ষা ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। সেই রিপোর্টে একাধিক ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতির ছবি স্পষ্ট ধরা পড়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে দেশজুড়ে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৪-০৬ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২১.৭ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগতেন। ২০১৭-১৯ সালের মধ্যে যা কমে ১৪ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে শুধু ভারত নয়। এশিয়ার আর এক জনবহুল দেশ চীনও ক্ষুধার হানাদারিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। দুই রাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সংঘাতকে উপেক্ষা করেই রাষ্ট্রসংঘের এই রিপোর্ট তাদের এক সারিতে বসিয়েছে। বলা হয়েছে, উভয় দেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতা আলাদা। কিন্তু একসঙ্গে সুফল মিলেছে। এ প্রসঙ্গে ওই রিপোর্টে তিনটি বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এক, দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক বিকাশ। দুই, বৈষম্যের ঘাটতি। তিন, প্রাথমিক পণ্যের সুলভ যোগান। এই তিন মন্ত্রেই ভারত ও চীন আলাদা আলাদাভাবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করেছে।
তবে, আলোর পাশাপাশি অন্ধকারও রয়েছে। অপুষ্টি নিরাময়ে নজর কাড়লেও রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্টে শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশে ভারতের ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের পাঁচ বছরের নীচে থাকা শিশুদের বৃদ্ধির হার গত কয়েক বছরে লক্ষ্যণীয়ভাবে কমেছে। ২০১২ সালে যা ছিল ৪৭.৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা ৩৪.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, আগামী দিনে বিশ্বজুড়ে অন্যতম চিন্তার বিষয় হয়ে উঠবে স্থূলতা। এ প্রেক্ষিতে তারা প্রাপ্তবয়স্কদের মেদবৃদ্ধি নিয়ে ভারতকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছে। এছাড়া রক্তাল্পতায় ভোগা মহিলাদের সংখ্যাও গত কয়েক বছরে লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারত ছাড়া বাকি বিশ্বের পরিস্থিতিটা ঠিক কীরকম? এককথায় বললে দাঁড়ায় সঙ্কটজনক। রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্ট মতে, গত এক দশকে এশিয়া থেকে আফ্রিকা — ক্ষুধার পরিধি ক্রমশ প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু, করোনা পরবর্তী বিশ্বে খাদ্যাভাব আরও সঙ্কটজনক চেহারায় হাজির হতে চলেছে। যার জেরে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার পরিকল্পনা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়াবে। রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৮ কোটি মানুষ অনাহারে ভুগতেন। এক বছরের মধ্যে সেই সংখ্যা আরও ১ কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, করোনার জেরে চলতি বছরের শেষে এক লপ্তে আরও ১৩ কোটি মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টির মুখোমুখি হতে চলেছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ঘনিয়েছে আফ্রিকাকে নিয়ে। কারণ আগামী এক দশক ধরে যদি এই প্রকোপ চলতে থাকে তাহলে সারা বিশ্বের অনাহারে থাকা মানুষদের অর্ধেকই হবে আফ্রিকার।
তাহলে পরিত্রাণের উপায়? প্রতিবেদন বলছে, এবার থেকে প্রতিটি দেশকে খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি তার প্রক্রিয়াকরণ ও বণ্টনে বিশেষ জোর দিতে হবে। গুণগত মানের সঙ্গে আপোষ না করে সুলভে তা মানুষের নাগালে পৌঁছে দেওয়াটাও জরুরি। শিশুদের পুষ্টির দিকে বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ভারতের গণবণ্টন ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্য ‘মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।