গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
১৯৪৮ সালের ৫ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় এনএইচএস। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খেতে শুরু করে জনকল্যাণমূলক এই প্রকল্প। কারণ, ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ চিকিৎসকরা কেউই প্রাইভেট প্র্যাকটিসের বিপুল হাতছানি ছেড়ে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে গরিববদের সেবা করতে রাজি ছিলেন না। তাও আবার কম বেতনে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর চিকিৎসকদের দাবিমতো বিরাট পরিমাণ বেতন দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না ব্রিটিশ প্রসাশনের। তাই অনেক চিকিৎসকই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে মার্কিন মুলুক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় চলে যেতে শুরু করেন। ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনস কমিটি ফর প্ল্যানিংয়ের চেয়্যারম্যানের তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটেনে গ্র্যাজুয়েট হওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে সেসময় ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। ফলে এই স্বাস্থ্য পরিষেবাকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর চিকিৎসকের প্রয়োজন দেখা দেয়। এমন সময় দক্ষিণ এশিয়া থেকে বহু তরুণ চিকিৎসক এদেশে পা রাখেন। আর রুটি-রুজির জন্য প্রত্যন্ত এলাকায় ডাক্তারি করতে যেতে একপ্রকার বাধ্য হন। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বর্তমানে ব্রিটেনে ২৯ হাজার ভারতীয় এবং সাড়ে ৭ হাজার পাকিস্তানি চিকিৎসক রয়েছেন। আর এরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের দেশে ডাক্তারি পড়েছেন। কিন্তু এদের লড়াইটা মোটেই সহজ ছিল না। বিশেষত চিকিৎসক হিসেবে ব্রিটেনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। কালো চামড়ার মানুষরা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শীর্ষে উঠে আসবেন, এমনটা মোটেই মেনে নিতে রাজি ছিলেন না শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ চিকিৎসকরা। তাই সেসময় অধিকাংশ এশীয় চিকিৎসকই জেনারেল ফিজিশিয়ান হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। উচ্চতর চিকিৎসা করার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও। যেমন ডাঃ রাহুল মুখোপাধ্যায়। কলকাতার এই বাসিন্দা বর্তমানে বার্মিংহাম হার্টল্যান্ডস হসপিটালের রেসপিটারি মেডিসিন ও ফিজিওলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান। পাশাপাশি এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি হসপিটালসে সাম্মানিক সিনিয়র ক্লিনিক্যাল লেকচারার। ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ব্রিটেনে আসেন। প্রফেশনাল অ্যান্ড লিঙ্গুইস্টিক অ্যাসেসমেন্টস বোর্ড (প্ল্যাব) টেস্ট পাশ করে চিকিৎসা করার ছাড়পত্র পান। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ২০০৭ সালে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর কথায়, ‘শুধুমাত্র ভারতীয় হওয়ায় কারণে এতটা সময় লেগেছে আমার। ব্রিটেনের বাসিন্দা হলে যেটা ৫-৬ বছরে করা যেত, সেই সুযোগ পেতে আমাকে ১১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ব্রিটিশ চিকিৎসকদের থেকে অনেক বেশি সময় আমাকে রেজিস্ট্রার পদে থাকতে হয়েছে। এটা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই, কারণ এই সময়ে আমার অভিজ্ঞতা মজবুত হয়েছে। আমি শুধু পার্থক্যটা বোঝাতে চাইলাম।’
তাঁর পরের প্রজন্মও নাম লিখিয়েছেন স্বাস্থ্য পরিষেবায়। ২৬ বছরের মেয়ে দেয়াসিনী বর্তমানে জুনিয়র চিকিৎসক। কিন্তু বাবার মতো রেসপিটারি মেডিসিনেই এগবেন কি না, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। শুধু বাবার মতো বিশ্বাস করেন, এই পেশা ন’টা-পাঁচটার ডিউটি নয়। এই ঘড়ি ধরে কাজ করবেন বলেই অনেকে উচ্চ চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইছেন না বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন রাহুলবাবু। তাই শুধু জেনারেল ফিজিশিয়ান হয়েই সন্তুষ্ট তাঁরা। কিন্তু বাবাকে থামিয়েই দেয়াসিনীর জবাব, ‘জুনিয়র ডাক্তারদের যেমন ৯টা-৫টার বাইরে কাজ করা বা বোঝা উচিত, তেমনই সিনিয়ির ডাক্তারদেরও তাঁদের এই কাজে অনুপ্রাণিত করা প্রয়োজন।’ মতানৈক্য নিয়েও ব্রিটেনবাসীর সেবা করে চলেছে এনএইচএসের দুই প্রজন্ম। বাবা ও মেয়ে।