ওয়াশিংটন, ৯ এপ্রিল (পিটিআই): বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বিরুদ্ধে ফের আক্রমণের রাস্তায় ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। চীনের প্রতি পক্ষপাত করার অভিযোগ আগেই এনেছিলেন তিনি। এবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, চীনের পাশে দাঁড়িয়ে করোনা বিপর্যয় নিয়ে রাজনীতি করছে হু। শুধু অভিযোগ নয়, আরও একবার মার্কিন অনুদান বন্ধের হুঁশিয়ারিও দিলেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, প্রথম দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের আক্রমণের মুখে পড়ে আসরে নেমেছিলেন হু প্রধান তেডরস আধানম ঘেব্রিয়েসাস। আমেরিকার হুমকির প্রেক্ষিতে তিনি আবেদন করেন, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক হতে হবে গোটা পৃথিবীকে। দোষারোপের খেলায় না মেতে চীন ও আমেরিকাকে একজোট হওয়ার আর্জিও জানান তিনি। পাশাপাশি, চীনের প্রতি ঝুঁকে থাকার অভিযোগ খারিজ করে আধানম বলেন, ‘যদি আরও বেশি মৃত্যু দেখতে না চান, তাহলে রাজনীতি বন্ধ করুন।’ হু প্রধানের এই মন্তব্য সামনে আশার পরই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন ট্রাম্প। ফের তোপ দাগেন তিনি। এদিন তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, ‘আমি খুনের হুমকি পাচ্ছি। বর্ণবৈষম্যেমূলক মন্তব্যও করা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। গত দু’-তিন মাসের বেশি সময় ধরে বিষয়টা চলছে। বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্যকে হেনস্তা বলেই জানি। কালো, নিগ্রো এইসব নামে ডাকা হচ্ছে আমাকে। হ্যাঁ, কালো বা নিগ্রো হওয়ার জন্য আমি গর্বিত। তাই এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। সত্যি বলতে, হত্যার হুমকি নিয়েও খুব একটা হেলদোল নেই আমার।’ হু’র শীর্ষকর্তার এহেন মন্তব্যে স্বভাবতই চোখ কপালে উঠে যায় ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত সাংবাদিকদের। ট্রাম্পের হুমকির পর তেডরোসের এই অভিযোগ। স্বভাবতই সবাই ধরে নিয়েছিলেন, মার্কিন মুলুকই হতে চলেছে তাঁর নিশানা। কিন্তু না। গোটা বিষয়টির দায় তিনি চাপান তাইওয়ানের উপর। বলেন, ‘তাইওয়ান থেকে তিনমাস আগে বিষয়টি শুরু হয়। আজ আমাকে সত্যিটা বলতেই হতো। এই বিষয়টি সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকও জানে। কিন্তু এটা বন্ধ করার পরিবর্তে ওরা আমার সমালোচনা শুরু করে। কিন্তু তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। এই মুহূর্তে জোট বেঁধে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটাই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কারণ, নির্বিচারে মানুষ মারা যাচ্ছেন।’ তাইওয়ানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জোয়ানে ওউ অবশ্য পাল্টা তোপ দেগেছেন। তিনি বিবৃতি দিয়েছেন, ‘এইসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। তাইওয়ান কখনও তার নাগরিকদের কারও বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য করতে উৎসাহিত করে না। প্রশাসনও এসবকে মান্যতা দেয় না। অবিলম্বে হু শীর্ষকর্তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’
একদিকে আমেরিকা। অন্যদিকে তাইওয়ান। সংঘাতের এই আবহে এদিন ট্রাম্প পাল্টা আক্রমণ করেছেন হু’কে। বলেছেন, ‘রাজনীতি করা ঠিক নয় সেটা সত্যি। কিন্তু রাজনীতি উনি (হু প্রধান) নিজেই করছেন। সেটা একেবারেই কাম্য নয়। আমরা গত বছর ৪৫ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে। আগেও কাঁড়ি-কাঁড়ি ডলার খরচ করেছি। ওদের আরও ভালো কাজ করতে হবে। আরও ভালো। ওঁর (হু প্রধান) মুখ থেকে রাজনীতি না করার কথা বিশ্বাস করতে পারছি না। চীনের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্পর্কটা একবার দেখুন। চীন ওদের ৪ কোটি ২০ লক্ষ ডলার সাহায্য দেয়। আমরা দিই ৪৫ কোটি ডলার। তবুও সব কিছুই মনে হচ্ছে চীনের পক্ষে। এটা ঠিক নয়। আমাদের সঙ্গে সুবিচার হচ্ছে না। সত্যি বলতে, গোটা বিশ্বের সঙ্গেই সঠিক হচ্ছে না।
আর হুকে অনুদান বন্ধের বিষয়টি আমেরিকা যে সত্যিই খতিয়ে দেখছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেওর কথায়। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গোড়া থেকেই একথা বলছেন। সব সংগঠনকে তাদের কাজটা করে দেখাতে হবে। শুধুমাত্র হু নয়, সব আন্তর্জাতিক সংগঠনের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। তাদের যা দায়িত্ব, সেই অনুযায়ী ফল করে দেখাতে হবে। আমরা করদাতাদের টাকা ওদের দিই। মার্কিন করদাতাদের এই অর্থের ফল যে মিলছে, আমেরিকাকে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।’