কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
সন্দীপ ও রীনা মান্দার। ব্রিটেনে বসবাসকারী এই শিখ দম্পতি শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিন বছর আগে তাঁদের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল বার্কশায়ারের দত্তক প্রদানকারী সংস্থা। এরপরেই রয়্যাল বরো অব উইন্ডসর অ্যান্ড মেইডেনহেড কাউন্সিলের বিরুদ্ধে মামলা করেন তাঁরা। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে তাঁদের পক্ষে রায় দেন বিচারক মেলিসা ক্লার্ক। তিনি জানান, বর্ণবৈষম্যমূলক কারণে ওই দম্পতির সঙ্গে পৃথক আচরণ করা হয়েছিল। ব্রিটিশ-শিখ দম্পতিকে ১ লক্ষ ২০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেন বিচারক।
মেইডেনহেডের মান্দার দম্পতি জানিয়েছেন, দত্তকের আবেদন জানানোর পর বার্কশায়ারের ওই সংস্থার পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে আর কখনও আবেদন না জানানোর জন্য বলা হয়। কারণ? তাঁরা ঐতিহ্যগতভাবে ভারতীয়। এরপরেই আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সন্দীপ ও রীনা ম্যান্ডার। এদিন বিচারকের সিদ্ধান্তের পর তাঁরা বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছিল, এনিয়ে পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। ভবিষ্যতে দত্তক নিতে গেলে অন্য কাউকে যাতে আমাদের মতো এমন কোনও পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়, তা নিশ্চিত করার জন্যই আমরা এই আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আজ এই মামলায় বিচারক দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর কখনও ঘটবে না।’
জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে সন্দীপ ও রীনা মান্দার সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সংস্থার তরফে তা করতে দেওয়া হয়নি। উল্টে তাঁদের ভারত বা পাকিস্তান থেকে দত্তক নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। যদিও এই মামলা নিয়ে কাউন্সিল বা দত্তক প্রদানকারী সংস্থার তরফে কোনও বিবৃতি দিতে অস্বীকার করা হয়। বরং দাবি করা হয়, যাঁরা কিছুটা বেশি বয়সের শিশু বা ভাইবোনদের দত্তক নিতে চান, তাঁদেরকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরে অবশ্য কাউন্সিলের মুখপাত্র বলেন, ‘এই মামলার রায়ে আমরা আশাহত। গোটা রায়টি খতিয়ে দেখার জন্য আরও সময় প্রয়োজন।’ নিজেদের নীতি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
অক্সফোর্ড কাউন্টি কোর্টের বিচারক ক্লার্ক এই মামলার শুনানির সময় বলেন, ‘জাতি বিদ্বেষের কারণে মান্দার দম্পতির সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। এর জন্য ওই দম্পতিকে যথেষ্ট আঘাত, কষ্ট পেতে হয়েছে। উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হয়েছে। এক নিঃসন্তান দম্পতি— বহুবার আইভিএফের পরেও যাঁদের সন্তান হয়নি, তাঁদের প্রতি সংস্থার আচরণ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’ এরপরেই সন্দীপ ও রীনা মান্দার— দু’জনকেই পৃথক পৃথকভাবে ২৯ হাজার ৪৫৪.৪২ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, বিদেশ থেকে সন্তান দত্তক নেওয়ার ব্যয় হিসেবে বিশেষ ক্ষতিপূরণ বাবদ ওই দম্পতিকে আরও ৬০ হাজার ১৩.৪৩ পাউন্ড দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন বিচারক। প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের সংস্থার তরফে আবেদন খারিজের পর ওই দম্পতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এক সন্তানকে দত্তক নেন।
দম্পতির তরফে এই মামলা লড়েন আইনজীবী জর্জিনা ক্যালভার্ট-লি। তিনি বলেন, ‘এদিনের মামলার রায়ে সেই সমস্ত ব্রিটিশ শিশুরা জয়ী হল, যাঁরা একটি সুন্দর দত্তক পরিবারের আশায় থাকে। পাশাপাশি জয়ী হলেন সেই সমস্ত ব্রিটিশ পরিবারও, যাঁরা এই শিশুদের নিজেদের পরিবারে অন্তর্ভূক্ত করতে চান।’