রূপাঞ্জনা দত্ত, ১৫ নভেম্বর: ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচনের একমাসও বাকি নেই। প্রচার তুঙ্গে। এরমধ্যেই নয়া চমক দিল ওয়েলস কনজারভেটিভ পার্টি। আসন্ন নির্বাচনে অ্যালিন ও ডিসাইড আসনে প্রার্থী হিসেবে এক বাঙালি বংশোদ্ভূত সঞ্জয় সেনের নাম ঘোষণা করল তারা। সঞ্জয় নিজেও বিশ্বাস করেন ব্রেক্সিট সমস্যার সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হিসেবে তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও। চলতি মাসের শুরুতেই এই বাঙালি বংশোদ্ভূত প্রার্থীর কেন্দ্র সফরে গিয়েছিলেন বরিস।
বর্তমানে লন্ডনের অয়েল অ্যান্ড গ্যাস অথরিটি সংস্থায় সিনিয়র ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত সঞ্জয়। ২০১৯ সালে বিবিসির ক্যুইজ শো ‘মাস্টারমাইন্ড’-এর সেমিফাইনালেও উঠেছিলেন। ওয়েলস কনজারভেটিভদের প্রার্থী মনোনীত হয়ে যারপরনাই আনন্দিত তিনি। রাজনীতি তাঁর কাছে নতুন নয়। ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে অ্যাবেরডিন নর্থ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন সঞ্জয় সেন। পরাজয় ভুলে এবার নতুন উদ্যমে প্রচারে নেমে পড়েছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলি নিয়েই প্রচারে জোর দিতে চান এই কনজারভেটিভ প্রার্থী। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার উৎসাহিত করেছিলেন তিনি। জানিয়ে ছিলেন, ‘কখনও নিজেকে বহিরাগত ভাববেন না। যদি এটা বিশ্বাস করেন আপনার কেন্দ্রের মানুষদের জন্য আপনার কিছু করার রয়েছে, তাহলে এগিয়ে যান।’ রাজনীতির বাইরেও লেখালিখি, ফুটবল, ভ্রমণের নেশা রয়েছে তাঁর।
আগামী ১২ ডিসেম্বর ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন। ১৯৮৭ সালে হাইস অব কমন্সে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমপির সংখ্যা ছিল মাত্র একজন। সেখান থেকে গত ২০১৭ সালের নির্বাচনে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছেন ১২ জনে। এবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের আরও দুই নতুন নাম হল লেবার পার্টির নভেন্দু মিশ্র এবং কনজারভেটিভ পার্টির গগন মহিন্দ্রা। নভেন্দু মিশ্রের বাবা-মা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন। ২০১৭ সালে হ্যাজেল গ্রোভ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত স্টকপোর্ট থেকে তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। ব্রিটেনের বিরোধী দলনেতা জেরেমি করবিনের সমর্থনকারী সংস্থা মোমেন্টামকে পাশে পেয়েছেন নভেন্দু। অন্যদিকে, সাউথ ওয়েস্ট হার্টফোর্ডশায়ার থেকে প্রার্থী হয়েছেন মহিন্দ্রা।
এবারের নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমপিদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এমন কেন্দ্রে বা ভারতীয় জনসংখ্যা বেশি থাকা কেন্দ্রে যথেষ্ট সংখ্যক ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে মনোনয়ন না দেওয়ায় লেবার পার্টির তীব্র সমালোচনা করেছে লেবার ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়া নামে একটি গোষ্ঠী। মাদক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোয় এবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এশীয় হিসেবে সবথেকে বেশি দিন এমপি থাকা কিথ ভাজ। তাঁর কেন্দ্র লেস্টার ইস্ট থেকে কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী না দেওয়াতেও ক্ষুব্ধ লেবার ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়া। মহিন্দ্রাও কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়ার সদস্য। এটিও দলের মধ্যে ভারতীয়দের সমর্থনকারী একটি গোষ্ঠী।
লেস্টার ইস্ট কেন্দ্রে কিথ ভাজের কাছে হেরে গিয়েছিলেন কনজারভেটিভ প্রার্থী কিষাণ দিবানি। লিবারাল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে এবার মন্টগোমারিশায়ারে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। এছাড়াও বেশ কয়েকজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমপি এবার পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা হলেন, লেবার দলের বীরেন্দ্র শর্মা (ইলিং সাউথহল), লিসা নন্দী (উইগান), ভ্যালেরি ভাজ (ওয়ালসাল সাউথ), সীমা মালহোত্রা (ফেলদাম অ্যান্ড হেস্টন), তনমনজিৎ সিং ধেসি (স্লাও) এবং প্রীত কাউর গিল (বার্মিংহ্যাম এজবাস্টন)। কনজারভেটিভ দলের শৈলেশ ভারা (নর্থ ওয়েস্ট কেমব্রিজশায়ার), অলোক শর্মা (রেডিং ওয়েস্ট), প্রীতি প্যাটেল (উইথাম), ঋষি সুনাক (রিচমন্ড, ইয়র্কশায়ার) এবং সুয়েলা ব্রাভেরম্যান (ফেয়ারহ্যাম)।