কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
জেলা আপৎকালীন আধিকারিক বাকির হুসেন জানান, লাহোর থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে রহিম ইয়ার খানের কাছে লিয়াকতপুরে ঘটেছে ঘটনাটি। আগুন ট্রেনের তিনটি কামরায় ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় সেখানে মহিলা ও শিশু সহ প্রায় ২০০ জন যাত্রী ছিলেন। পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ জানান, মৃতদের অধিকাংশই ‘তবলিঘি জামাত’ নামে এক ইসলামিক ধর্মপ্রচারক গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন। লাহোরের রাইউইন্ড এলাকায় এক বার্ষিক ধর্ম সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। রেলমন্ত্রী দাবি করেন, আইন লঙ্ঘন করে কয়েকজন যাত্রী চলন্ত ট্রেনে গ্যাসের স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না করছিলেন। সেই গ্যাসের সিলিন্ডারে বিস্ফোরণের ফলেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেন, ‘চলন্ত ট্রেনে দু’টি ছোট গ্যাসের স্টোভ জ্বালিয়ে সকালের জলখাবার তৈরি হচ্ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেখান থেকেই কোনও ভাবে সিলিন্ডারগুলি ফেটে গিয়ে তিনটি কামরায় আগুন লেগে যায়।’ মৃতদের পরিবারকে ১৫ লক্ষ এবং জখমদের ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণাও করেন তিনি।
যদিও পাক রেলমন্ত্রীর এই দাবি খারিজ করে দিয়েছে তবলিঘি জামাত। তাদের পাল্টা দাবি, সিলিন্ডার ফেটে নয়, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন ছড়ায়। সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, কয়েকজন আহত যাত্রী তাদের জানিয়েছেন যে, বুধবার রাতে বিদ্যুতের তার পোড়ার গন্ধ পেয়ে তাঁরা সেটা রেলকর্মীদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনও ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। তারপরই বৃহস্পতিবার ভোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার কারণ খুঁজতে ইতিমধ্যেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মৃতদের প্রতি শোকজ্ঞাপনের পাশাপাশি জখমরা যাতে সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা পান, তা দেখার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশও দেন তিনি।
আধিকারিকরা জানিয়েছে, আগুন লাগা অবস্থায় অন্তত ২ কিলোমিটার ছোটার পর থামে ট্রেনটি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বেশ কয়েকঘণ্টার চেষ্টায় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন আগুন আয়ত্তে আনে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মদতে সেনা কপ্টারে করে জখমদের তড়িঘড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়। যদিও জখমদের প্রায় সকলেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। লিয়াকতপুর হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার নাদিম জিয়া জানান, বেশ কয়েকটি দেহ পুরোপুরি ঝলসে যাওয়ায় তাঁদের পরিচয় জানতে সমস্যা হচ্ছে। তাঁদের পরিচয় জানতে ডিএনএ টেস্টের আশ্রয় নেওয়া হবে বলেও জানান সুপার।
ঘটনার বীভৎসতা ঠিক কতটা ছিল, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে তার আভাস মিলেছে। বেঁচে গেলেও আগুনে শরীরের বেশ কিছুটা পুড়ে গিয়েছে ইফতিকার আহমেদের। এদিন লিয়াকতপুর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ইফতিকার বলেন, ‘মা, ভাই আর বোনকে নিয়ে সফর করছিলাম। ভোর ছ’টা নাগাদ আচমকাই বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর আমাদের কামরায় আগুন ধরে যায়। কামরার মধ্যে তখন শুধুই ছোটাছুটি আর আর্ত চিৎকার। আগুন এগিয়ে আসছে দেখে আমি পরিবারের সবাইকে বাইরে লাফাতে বলি। আমি আর ভাই লাফাতে পারলেও মা আর বোন পারেনি।’