বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
আমেরিকা সম্পর্কে আমাদের দেশের অনেকের ধারণা খুব অদ্ভুত। একদল মনে করেন, এদেশে না আছে কোনও নৈতিক শাসন, না আছে সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা। আর তার ফলে এদেশটা হাজার পঙ্কিলতায় আকন্ঠ মজ্জিত। এদের কাছে আমেরিকা মানেই যৌনতা, জুয়া, মদ্যপান, ড্রাগ আসক্তি, চোখ ধাঁধানো-কেচ্ছাগন্ধমাখা সব হোটেল, পৃথিবীর সেরা সব লাক্সারি গাড়ি...। নিষিদ্ধ আনন্দ পেতে যা লাগে তার সবই মজুত। আর একদিকে রয়েছেন তাঁরা, যাঁদের কাছে আমেরিকা এক স্বর্গরাজ্য। এখানে নাকি দারিদ্র্য নেই, অভাব নেই, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা-সঙ্কট নেই। এখানে নাকি প্রত্যেকের বাড়ির পিছনে একটা করে ডলারের গাছ বসানো আছে, নাড়া দিলেই ডলার ঝরে ঝরে পড়ে! আরও কত কী! এসব কথার বেশির ভাগই হয় অতিরঞ্জিত। নয়তো ঊর্বর মস্তিষ্কের কল্পনাপ্রসূত। কে না জানে, হলিউডের সস্তা ছবির কল্যাণেও নেগেটিভ কথাবার্তার প্রচার হয়েছে বেশি। তার উপরে রয়েছে এখনকার নয়া যুগের মার্কিনি সস্তা টিভি শো। আসলে আমেরিকা কোনও স্বপ্নের দেশ নয়। কোনও ওয়ান্ডারল্যান্ড নয়। এ এক অন্য জগৎ।
যেখানে সবই নিয়মমাফিক। যেমন ধরুন, সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে সন্ধ্যার পর যার যার বাড়ির সামনে পলেথিন প্যাকেটে মুখ ভালোভাবে আটকে ময়লা রেখে দিতে হবে। গাড়ি এসে ময়লা নিয়ে যাবে। নির্ধারিত দিন বা সময়ের আগে ময়লা ফেললেই ‘বিপদ’ দরজায় কড়া নাড়বে। এখানে প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং জনবহুল এলাকায় এক বা একাধিক প্লাষ্টিকের ডাষ্টবিন বসানো থাকে। শহর নোংরা করার উপায় কোথায়! আমেরিকার কোনও বাড়িতে ছাদ নেই। কেন জানেন? বাড়ির বাইরে শুকানোর জন্য ভেজা কাপড় কোথায় মেলা যায় না। তাতে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। শীতের সময় প্রতিটি বাড়ির সামনে জমা ‘স্নো’ বা যে-কোনও ময়লা বাড়িওয়ালাকে নিজের দায়িত্বে পরিষ্কার করতে হবে। এদেশে তো কাজের লোক নেই। কাজেই বাড়িওয়ালা ‘ভদ্রলোক’কে স্বপরিবারে নিজের বাড়ি পরিষ্কার করতে দেখা নিয়মিত ঘটনা। এ এক এমন দেশ, যেখানে প্রতিটি ফার্মেসিতে একজন সার্টিফাইড ‘ফার্মাসিষ্ট’ থাকতেই হবে। নইলে ওষুধের দোকান খোলা যাবে না। নাপিতকেও স্কুলে এক বছরের একটি ট্রেনিং শেষ করে, সার্টিফিকেট নিয়ে তারপর সেলুন খুলতে হয়।
এদেশে প্রতিটি রেষ্টুরেন্টেই ন্যূনতম একজন ‘ফুড লাইসেন্স’ সম্পন্ন সেলস পার্সন থাকতে হবে এবং এই ফুড লাইসেন্সটি প্রয়োজনীয় ট্রেনিং শেষে দেয় ফুড ডিপার্টমেন্ট। প্রতিটি রেষ্টুরেন্টে প্রশাসনিক কর্তারা নিয়মিত ঢুঁ মারেন। রেষ্টুরেন্টের সমগ্র ব্যবস্থাপনা ও খাবারের মান দেখে মূল দরজার সামনে বড় করে একটি ষ্টিকার ‘এ’, ‘বি’ অথবা ‘সি’ ইত্যাদি ক্যাটাগরির নম্বর লাগিয়ে দিয়ে যান। ‘বি’ বা ‘সি’ মানেই আপনি বুঝবেন, জরিমানা চেপেছে মালিকের ঘাড়ে। কিংবা ক্রেতা সহজেই বুঝে যাবেন এই রেষ্টুরেন্ট কোন গ্রেডের। বার্গারে বাসি মাংস দেওয়া হয় না তো? প্রশ্ন শুনে, রীতিমতো আঁতকে উঠেছিলেন এক দোকানের মালিক। যেন, এ কথা মুখে আনাও পাপ!
এখানে রাস্তার প্রত্যেকটি দোকানে যেন চুম্বক আটকানো আছে, একবার না ঢুকে উপায় নেই। রাতের আমেরিকা সত্যিকারের জাগ্রত। কাফে রেস্তোরাঁগুলো ভিড়ে ভরা। জায়গা পাওয়া দায়। ছেলেমেয়েরা এক কাপ কফি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায়। মাঝে-মাঝে কেউ-কেউ চেঁচিয়ে কবিতা পড়ে। এ ওর মুখ থেকে কাড়াকাড়ি করে সিগারেট। আর সজাগ থাকলে কখনও শুনতে পাবেন, ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম।’ নির্ভুল সুরে। অবিকল যেন আমাদের কলকাতার কোনও চায়ের ঠেক।