কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে ক্ষমতায় জোট সরকার আসার পর পড়ুয়াদের দু’বছরের কাজের সুযোগ খর্ব করা হয়েছিল। পড়া শেষের পর আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের দু’বছর কাজ করার জন্য ভিসা দেওয়ার বিষয়টিকে ‘অতিরিক্ত উদারতা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন হোম সেক্রেটারি হিসেবে টেরিজা মে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্ব্রাস পায়। এরপরেই পুরনো নিয়ম ফিরিয়ে আনার জন্য সরব হন সদ্যপ্রাক্তন মন্ত্রী জো জনসন। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভাই পদত্যাগ করার আগে, গত এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের দু’বছর কাজের ভিসা দেওয়ার বিষয়টি পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য সংশোধনী নিয়ে একটি বৈঠকও করেন। নতুন এই নীতিতে পড়ুয়ারা যে কোনও চাকরির জন্যই আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের দক্ষতা বা পড়ার বিষয়ের ক্ষেত্রেই চাকরির আবেদনের বিষয়ে কোনও বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সরকারি সূত্রে খবর, মেধাবী পড়ুয়াদের অঙ্ক, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে নিয়োগের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। ব্রিটেনের শিক্ষাসচিব গ্যাভিন উইলিয়ামসন বলেন, ‘আমাদের দেশে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পড়ুয়ারা বিশেষ অবদান রেখেছেন। তাঁদের এই ভূমিকার ফলে ব্রিটেন লাভবান হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে পড়ুয়ারা যাতে আরও বেশি সময় এদেশে কাজ করতে পারেন, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, ব্রেক্সিটের পর ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলি থেকেও পড়ুয়াদের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়বে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন অনেকে। গত বছর ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইউরোপ ব্যতীত আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ ৬০ হাজার। আগামী ১০ বছরের মধ্যে তা ৬ লক্ষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চিফ এগজিকিউটিভ অ্যালিস্টার জার্ভিস জানিয়েছেন, এর আগে ভিসা সংক্রান্ত কড়াকড়ির জন্য আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের সংখ্যা হ্ব্রাস পাচ্ছিল। পড়া শেষের পর দু’বছর কাজ করার ভিসা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের কাছে দরবার করা হচ্ছিল। এসংক্রান্ত নীতি বদলের জন্যও বার্তা দেওয়া হয়েছিল। সরকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আবার পড়ুয়াদের কাছে প্রথম পছন্দ হয়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্রিটেনের শিক্ষা দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, যে সমস্ত পড়ুয়ারা সফলভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করবেন, তাঁরাই এই সুযোগ পাবেন। পরবর্তীতে পড়ুয়ারা আরও বেশি সময়ের জন্য ভিসার আবেদনও করতে পারবেন। ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পড়ুয়াদের সংগঠন ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টস অ্যান্ড অ্যালুমনি ইউনিয়ন ইউকে (নিসাউ)-এর তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ২০২০-২১ সালে শিক্ষাবর্ষে যে সমস্ত পড়ুয়ারা নথিভুক্ত করবেন, তাঁরা পাঠ শেষের পর দু’বছর কাজ করার ভিসা পাবেন। সংগঠনের চেয়ারপার্সন সোনম আরোরা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের বড় প্রভাব পড়বে ভারতীয় পড়ুয়াদের উপর। পড়া শেষের পর কাজ করার সুযোগের বিষয়টি নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জানিয়েছিলেন। অনেকে পড়ার জন্য বড় অঙ্কের ঋণ নেন, তা পরিশোধ করার জন্য বা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অনেকেই কাজ করার সুযোগ চান। সেই কারণে গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা এই দাবি জানিয়ে আসছি। শেষ পর্যন্ত আমরা সুবিচার পেলাম। তবে নতুন নিয়ম নিয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। সেই কারণে গোটা বিষয়টির উপর ভালোভাবে লক্ষ্য রাখার জন্য পড়ুয়াদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।’ এই দাবি পূরণের লড়াইয়ে গত বেশ কয়েক বছর ধরে পাশে থাকা এবং সমর্থন করার জন্য লর্ড করণ বিলিমোরিয়ার পাশাপাশি এমপি জো জনসন, পল ব্লুমফিল্ড এবং বীরেন্দ্র শর্মাকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে হোম সেক্রেটারি প্রীতি প্যাটেল বলেন, ‘এর ফলে বিজ্ঞান ও অঙ্ক বা প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সহ অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রতিভাবান আন্তর্জাতিক পড়ুয়ারা পড়া শেষের পর ব্রিটেনে চাকরি করার সুযোগ পাবেন। এই পদক্ষেপ থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে। পাশাপাশি, ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়তে আসার জন্য বিশ্বের অন্যতম সেরা মেধাবীরাও আকৃষ্ট হবেন।’ ভারতে নিযুক্ত ব্রিটেনের হাই কমিশনার স্যার ডমিনিক অ্যাসকুইথ বলেন, ‘ভারতীয় পড়ুয়াদের জন্য এটা অত্যন্ত সুখবর। এর ফলে তাঁরা পড়া শেষের পর ব্রিটেনে থেকে কাজের ক্ষেত্রে আরও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই ব্রিটেনে। প্রতি বছর সেখানে ভারতীয় পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়ছে। শুধুমাত্র গত বছরেই পড়ুয়াদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২ শতাংশ।’