পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এদিনের আগে পর্যন্ত পাকিস্তান প্রতিবারই জম্মু ও কাশ্মীরকে ‘ভারতশাসিত কাশ্মীর’ বা ‘ভারত অধিকৃত কাশ্মীর’ বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু মঙ্গলবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদে ছবিটা আচমকা এভাবে বদলে যাওয়ায় চোখ কপালে উঠেছে পাকিস্তানের ‘বন্ধু’ দেশগুলির। এদিন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদের ৪২তম অধিবেশনে বক্তব্য রাখার শুরুতে অবশ্য জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের সমালোচনায় সরব হন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী। তিনি জানান, জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে ভারত। সুতরাং কাশ্মীরের পরিস্থিতিকে কোনওমতেই আলাদা করে দেখা উচিত নয়। তিনি আরও জানান, কাশ্মীরের সঙ্গে বাইরের কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না। মোবাইল, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। দোকানপাট খুলছে না। চিকিৎসা পরিষেবাও বিপর্যস্ত। স্থানীয়দের ন্যূনতম মানবাধিকারকেও মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ভারত অবৈধভাবে ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছে বলেও দাবি করেন কুরেশি।
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের যাবতীয় দাবি অবশ্য উড়িয়ে দেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের সচিব (পূর্ব) বিজয় ঠাকুর সিং। বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীর ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়। বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যেই জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ করেছে কেন্দ্র।’ ইসলামাবাদকে কড়া জবাব দিয়ে বিজয় জানান, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও মনগড়া অভিযোগ তোলা হচ্ছে। পাকিস্তানের নাম না করে তাঁর কড়া বার্তা, কাশ্মীর নিয়ে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র থেকে মনগড়া নানা কথা প্রচার করা হচ্ছে। জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি কূটনীতি হিসেবে সেই দেশ সীমান্তপারে লাগাতার সন্ত্রাস চালায়। আর এই গোটা বিষয়টি সম্পর্কে সমগ্র বিশ্বই অবগত।
এদিন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে একটি ডসিয়েরও জমা দেয় পাকিস্তান। উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী, ওমর আবদুল্লারা। তাঁদের বক্তব্যও এই ডসিয়েরে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও একে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি ভারতীয় প্রতিনিধিরা।
সম্মেলন কক্ষে পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের মানবাধিকার নিয়ে গলা ফাটালেও বাইরের ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদর দপ্তরের ভিড় জমিয়েছিলেন বহু প্রতিবাদী মানুষ। পাকিস্তানে কীভাবে দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তা তুলে ধরে প্রতিবাদে সরব হন তাঁরা। এই ঘটনায় দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে ইসলামাবাদের প্রতিনিধিদল।
গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে ভারত। পাশাপাশি, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার কথাও ঘোষণা করে নয়াদিল্লি। ভারতের পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দেয় পাকিস্তান। কিন্তু এই বিষয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মানা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় ভারত। তারপরও বহু চেষ্টা করেও কোনও দেশের সমর্থন জোটাতে পারেনি পাকিস্তান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন সহ বিভিন্ন দেশ ভারতের পাশে থাকার বার্তা দেয়। সেই সময়েও জম্মু ও কাশ্মীরকে ‘ভারতশাসিত কাশ্মীর’ বলেই উল্লেখ করেছিল পাকিস্তান। সাম্প্রতিককালে কাশ্মীর ইস্যুতে কার্যত একঘরে হয়ে পড়া পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হিসেবে স্বীকার করতে বাধ্য হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, কুরেশির এই বক্তব্য সামনে আসতেই ঝড় উঠেছে নেট দুনিয়ায়। উপত্যকার কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে পাক বিদেশমন্ত্রীর এহেন মন্তব্য ঘিরে কার্যত দু’ভাগ হয়ে পড়েছেন নেটিজেনরা। একদিকে ভারতীয়দের অনেকে ট্যুইটার, ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরেশির বক্তব্যের ভিডিওটি ট্যাগ করে লিখেছেন, এতদিনে ভারতের বক্তব্যকে মান্যতা দিল পাকিস্তান। অপরদিকে, কুরেশির তীব্র সমালোচনা করেছেন পাক নেটিজেনদের অনেকে। তাঁদের মতে, কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্য করার সময় আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল বিদেশমন্ত্রীর। ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য কুরেশি জেনিভায় গিয়েছেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
‘বন্ধু’ চীনও কি তেমনটাই মনে করছে? জবাব দিতে হবে কিন্তু পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকেই।