নিউ ইয়র্ক: আমেরিকান সেনাদের ৬০ শতাংশই নাকি অতিরিক্ত মোটা! এক রিপোর্টে এমনই তথ্য জানাচ্ছে র‌্যান্ড কর্পোরেশন নামে একটি আন্তর্জাতিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। একটা দেশের সেনাবাহিনীতে সেনারা স্বাস্থ্য ও ওজনের দিক থেকে কেমন হবে— তা নির্ধারিত হয় একটা মাপকাঠি দিয়ে, যাকে বলে বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই। এই বিএমআই হিসাব করে বের করা হয় যে একজন সেনার উচ্চতা এবং ওজনের অনুপাত আদর্শ এবং স্বাস্থ্যকর সীমার মধ্যে আছে কিনা। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, পৃথিবীর অনেক দেশেই সেনাদের মধ্যে স্থূলতা, বা অলস জীবনযাপনজনিত সমস্যা তৈরি হয়েছে। এমনকী চীনের সেনাবাহিনীতে কম্পিউটার গেমে আসক্তিও এক সমস্যা হয়ে উঠছে।
র‌্যান্ড কর্পোরেশনের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকান সেনাদের প্রায় ৬৬ শতাংশের ওজনই মাত্রাতিরিক্ত রকমের বেশি। এমন এক সময় এই হিসেব প্রকাশিত হল, যখন আমেরিকান তরুণদের বেশিরভাগই সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, ২০১৭ সালে ১৬ থেকে ২৪ বছরের আমেরিকানদের মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। আরও খারাপ খবর হচ্ছে, যারা নিয়োগের পরীক্ষায় বাতিল হয় তাদের এক-তৃতীয়াংশই বাদ পড়ে অতিরিক্ত মোটা হওয়ার কারণে। অথচ, স্থূলতা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসার জন্য কিংবা বাদ-পড়াদের শূন্যস্থান পূরণ করতে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে প্রতি বছর দেড়শো কোটি ডলার খরচ করতে হয়। একথা জানিয়েছেন এক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জেফরি ফিলিপস।
কিন্তু শুধু আমেরিকান সেনাদের মধ্যেই কি এ সমস্যা? অন্যদের অবস্থা কী? চীনা সেনাদের নাকি প্রধান সমস্যা হচ্ছে ফাস্ট ফুড খাওয়া। এই তথ্য জানিয়েছে চীনা সেনাবাহিনীর পত্রিকা ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি ডেইলি’র এক রিপোর্ট। এতে এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, নিম্নমানের খাওয়া, দীর্ঘ সময় কমপিউটার গেম নিয়ে বসে থাকা এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব— এ গুলোই হচ্ছে তরুণ সেনাদের ফিটনেস টেস্টে অনুত্তীর্ণ হওয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ। বলা হয়, নতুন প্রার্থীদের ২০ শতাংশ ওজন পরীক্ষায় ফেল করেছে। কিছু সেনা ৫ কিলোমিটারের দূরপাল্লার দৌড় শেষ করতে পারেনি।
ইরানের সেনাদেরও মোটা হওয়ার সমস্যা বাড়ছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডট অর্গ নামে একটি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ওয়েবসাইট বলছে, ইরানের পাঁচ লাখ সক্রিয় সেনা সদস্য রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে বিএমসি পাবলিক হেলথ নামে এক জার্নালের নিবন্ধে বলা হয়, ইরানে ৪১ শতাংশ সেনার ওজন আদর্শ মাত্রার চেয়ে বেশি, এবং ১৩ শতাংশ রীতিমত স্থূলকায়।
সম্প্রতি ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় সেনা ঘাঁটি ক্যাটারিকের সেনাদের গ্রেগস নামে একটি রুটির দোকান থেকে খাবার কেনা নিষিদ্ধ করা হয়। তথ্য বলছে, দশ শতাংশ ব্রিটিশ সেনাই ডাক্তারি মাপকাঠিতে মোটা। এই রিপোর্ট প্রকাশের পরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ তো সতর্ক করে বলেছেন, সেনারা যেভাবে মোটা হচ্ছে, তাতে হয়তো অচিরেই যুদ্ধবিমান এবং সাবমেরিনের চালকের আসন চওড়া করে বানাতে হবে। স্পেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মেক্সিকোর সেনাবাহিনীতেও সেনাদের স্থূলতার সমস্যা মোকাবিলা করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই সমস্যার কারণ কি? অনেকেরই ধারণা যে সামরিক বাহিনীর লোকেরা যে প্রশিক্ষণ নেয়, তাতে তাদের সবারই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ব্যাপারটা তা নয়। এর কারণ কী? তা বের করতে কিছু গবেষণা করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর লোকরা নানা রকম স্ট্রেস বা চাপের শিকার হয়। তারা মৃত্যু ও অন্যান্য নানা রকম ক্ষতিকর ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। তাদের ঘুমের ব্যাঘাত হয়। এগুলোর কারণে তাদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হতে পারে। যার ফলে অতিরিক্ত মোটা হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।