বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
রাশিয়ার মস্কোর ওই আলোচনার টেবিলে ৪৮ জন পুরুষ। দুজন মেয়ে। তাঁদেরই একজন ফওজিয়া। তিনি বলেছেন, যেকোনও পদে দায়িত্ব পালনের জন্য মেয়েরা যোগ্য। কোনও মেয়ে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতেই পারেন। কারণ দেশের সংবিধানে সে সুযোগ আছে। তালিবান জঙ্গিদের ইচ্ছে-অনিচ্ছে এখানে মূল্যহীন।
ফওজিয়া আফগানিস্তানের পার্লামেন্টের প্রথম মেয়ে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নারী অধিকার রক্ষায় তিনি কাজ করেন। পার্লামেন্টের বাঘা বাঘা সব পুরুষ সদস্য ফওজিয়া কর্মকাণ্ডে খুব বেশি খুশি ছিলেন না। মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় খুব বেশি সায় ছিল না তাঁদের। তবে ফওজিয়া দমেননি। তিনি জানতেন, সবাইকে খুশি করা যায় না। মেয়ে বলে তাঁকে অনেক ক্ষেত্রেই দমিয়ে রাখার চেষ্টা চলেছে। এই অবস্থানে আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে সবার পিছনে জায়গা দেওয়া হতো। বিদেশি গণমাধ্যমে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হতো না। আফগানিস্তানের রক্ষণশীল সমাজে জন্মের পর থেকে বাঁচার লড়াই করছেন তিনি। লড়াই–ই তাঁর জীবন।
মেয়ে হয়ে জন্মানোয় সৎমা তাঁকে সারা দিন কড়া রোদে ফেলে রেখেছিলেন। সৎমা চেয়েছিলেন—ফওজিয়া মরে যান। পরিবারের ২৩ সন্তানের মধ্যে ফওজিয়া একজন। সেদিন ছোট্ট শিশুটির তুলতুলে নরম শরীরটা প্রখর রোদে পুড়ছিল। হয়তো পুড়তে পুড়তেই শক্ত হচ্ছিল। জন্মদাত্রী মা ফওজিয়াকে ওই অবস্থায় দেখতে পান। রোদ থেকে ছায়ায় নিয়ে যান। সেদিন থেকেই মায়ের ছায়ায় শুরু হয় তাঁর লড়াই। তিনি পরিবারের প্রথম মেয়ে সন্তান, যে স্কুলে গিয়েছিল। পড়াশোনা ভালোই চলছিল। ১৯৯৬ সালে তালিবান সরকার জোর করে ফওজিয়ার মেডিক্যাল কলেজে পড়া বন্ধ করে দেয়। এরপর মার্কিন সেনাবাহিনী তালিবান জঙ্গি দমন অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে তিনি ইউনিসেফে কাজ শুরু করেন। ২০০৫ সালে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পার্লামেন্টে তিনিই প্রথম মেয়ে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।
তালিবান নেতাদের হুমকি বন্ধ হয়নি। তালিবান জঙ্গিরা ফওজিয়ার স্বামীকে কারাবন্দি করেছে। পার্লামেন্ট সদস্য হওয়ার পর তাঁকে জঙ্গিরা মেরে ফেলতে চেয়েছে। মেয়ে অধিকার নিয়ে তাঁর সরব হওয়াটাই তাঁদের ক্ষোভের কারণ।
ফওজিয়াকে সেই ভয়ঙ্কর শত্রুদেরই মুখোমুখি হতে হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে মস্কোয় বিলাসবহুল একটি হোটেলে তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গে এক আলোচনায় ছিলেন তিনি। সুযোগটা পেয়েই ফওজিয়ার মনে হয়েছিল, তালিবানদের বুঝিয়ে দিতে হবে তাদের মেয়ে-বিদ্বেষ আর আফগানিস্তানে শিকড় গাড়তে পারবে না। কাবুলে নিজের বাড়িতে এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে ফওজিয়া বলেন, আফগানিস্তানের মেয়েদের জন্য কাজটি জরুরি ছিল। তালিবানদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে ক্ষমতাবান মনে হচ্ছিল।
ফওজিয়া তালিবান জঙ্গিদের বলেন, তোমরা আমার মেয়েকে বাড়িতে আটকে রাখতে পারো না। পৃথিবীকে দেখার, চেনার জানালা তোমরা বন্ধ করে দিতে পারো না। আমার মেয়ের এখন বাইরের জগতের সঙ্গে অনেক বেশি যোগাযোগ রয়েছে। তোমরা তাঁকে তোমাদের সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারো না। তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার একটি অংশ হিসেবে মস্কোতে ওই আলোচনা হয়। গত সোমবার দোহায় তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ওয়াশিংটন। দীর্ঘদিন ধরে চলা হিংসার অবসান খোঁজা হচ্ছে ওই আলোচনায়। তবে আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণসহ অনেক পর্যবেক্ষকের ভয়, মার্কিন সেনারা দ্রুত চলে গেলে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। তালিবানরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারে।
তালিবান শাসনে ফিরতে ভয় পান আফগানিস্তানের মেয়েরা। তাঁদের ভয়, এতে আবার জীবন অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে। শিক্ষাক্ষেত্রে বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সুযোগ হারাবেন। মস্কোর ওই আলোচনায় এসব কথাই জোর দিয়ে বলেছিলেন ফওজিয়া। ফওজিয়া এক মজার অভিজ্ঞতাও বলেন। মস্কো যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে তাঁর সহযাত্রী ছিলেন তালিবান এক পুলিস। তালিবান সরকারের ওই পুলিস হিলাক্স পিকআপ গাড়িতে ঘুরে বেড়াতেন। যখন–তখন অশালীনতার অভিযোগ আনতেন মেয়েদের বিরুদ্ধে। তাঁদের মারধর করতেন। তালিবান ওই পুলিসকে সে কথা মনে করিয়ে দেন ফওজিয়া। বলেন, ‘সে সময়টা কতটা ভয়ঙ্কর আমি মনে করতে পারি। গাড়ির শব্দ এখনও আমার কানে বাজে। আমি আমার মতো। তুমি পছন্দ করো বা না করো, আমি বদলাব না।’