বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধিকে অগ্রাধিকার দেয়, নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ সেসব রোগের একটি। এ রোগের এখনও কোনও টিকা আবিষ্কার হয়নি। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশই মারা যায়। মানুষ থেকে মানুষেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। বাদুড় খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার সময় নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। সেই রস পান করলে মানুষও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। একইভাবে বাদুড়ে খাওয়া কাঁচা পেয়ারা, বরই বা অন্য ফল থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। তাই খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে খাওয়া এবং এমন ফল না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ২০০১ সালে বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। প্রায় প্রতিবছরই এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। তা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে এবং কেরলেও। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই মারা গিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত বেঁচে থাকা রোগীরা দীর্ঘ মেয়াদে নানা ধরনের স্নায়ুগত জটিলতায় ভুগে থাকে। গত বছরের মে মাসে কেরলে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। কেরালায় আক্রান্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জনই মারা গিয়েছে।
গবেষকেরা বলছেন, নিপাহ ভাইরাসের বাহক মূলত একই প্রজাতির বাদুড়। এত দিন বিভিন্ন প্রজাতির বাদুড়ের রক্তরস অথবা জিনগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার (পলিমারেজ চেইন রি-অ্যাকশন) মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস বা এই ভাইরাসের সংক্রমণকে চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু বাদুড় থেকে জীবিত নিপাহ ভাইরাসকে জিনগত মানচিত্রের মাধ্যমে আলাদা করা সম্ভব হয়নি। কেবল মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ায় দুটি সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ার ‘সুঙ্গাইয়র নিপাহ’ গ্রামে প্রথম নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই গ্রামের নামেই ভাইরাসটির নামকরণ। সেই বছর দেশটিতে আক্রান্ত প্রায় ৩০০ জনের মধ্যে ১০০ জনের বেশি মারা গিয়েছিল। সেখানে বাদুড় থেকে শূকরে এবং শূকর থেকে মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়ায়।
এবার বিজ্ঞানীরা টেরোপাস মেডিআস গোত্রের বাদুড় থেকে নিপাহ ভাইরাসের জিন নকশা উন্মোচন করলেন। জিনোম হল জীবের জিনগত বৈশিষ্ট্যের বিন্যাস বা নকশা। বংশগতির সব বৈশিষ্ট্যই এক বা একাধিক জিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এসব বৈশিষ্ট্যের তথ্য জানার প্রাথমিক পদক্ষেপ হল জিন নকশা উন্মোচন। এ থেকে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণের কৌশল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। আকারে বেশ বড় এই বাদুড় ফলখেকো বা উড়ন্ত শিয়াল নামে পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এদের বসবাস।
অত্যন্ত সংক্রামক ও ঝুঁকিপূর্ণ এই ভাইরাসের নমুনাগুলো অস্ট্রেলিয়ার প্রাণী স্বাস্থ্য গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষকেরা জিনগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে টেরোপাস মেডিআস গোত্রের বাদুড় থেকে ১০ ধরনের নিপাহ ভাইসারকে আলাদা করেন। জিনগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এসব ভাইরাসের মধ্যে ৯৯.৯ শতাংশ মিল রয়েছে। দূর-দূরান্তের বাদুড়ের ভাইরাসের মধ্যেও মিল পাওয়া গিয়েছে। বাদুড়গুলোর বিভিন্ন আবাসস্থলের মধ্যে আনাগোনা কিংবা চলাচলের যোগসূত্রকে এমন মিলের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।