পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
গোয়েন্দাদের দাবি, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো মাদক সেবনের আখড়া। সেখানে দিন দিন বাড়ছে মাদক বিক্রিও। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ইয়াবার চালান ও পাচারকারী ধরা পড়ার পরিমাণ অনেকটাই বেশি। মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তারা বলছেন, মায়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বাড়ার পর মেথাফেটামাইন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণে তৈরি ‘উত্তেজক বড়ি’ ইয়াবার পাচার বেড়ে গিয়েছে।
পুলিসের তথ্য বলছে, গত এক বছরে কক্সবাজারের নতুন আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক ও নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ১৮ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছে। এই ঘটনায় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২৩৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মাদক মামলা ৬৮টি, ৬টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। বাকিগুলো ডাকাতি, মারামারি, চুরি ও চোরাচালানসহ অন্যান্য। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ১২২ জন। গত ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারে পুলিস, র্যা ব ও বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ১৪ জন মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে চারজনই রোহিঙ্গা বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এমনকী গত ১২ জানুয়ারি মায়ানমার থেকে ইয়াবার একটি বড় চালান নিয়ে নাফনদ দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়। এর আগে ৫ জানুয়ারি সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে দুই রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিস। তাদের কাছ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশের পুলিস, র্যা ব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের গত তিন বছরের (২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, রোহিঙ্গারা আসার পর শরণার্থী অধ্যুষিত কক্সবাজার জেলায় ইয়াবা আটকের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৬ সালে টেকনাফ উপজেলা থেকে উদ্ধার করা ইয়াবার মোট পরিমাণ দেড় কোটি। ২০১৭ সালে উদ্ধার করা ইয়াবার সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় দুই কোটিতে। আর ২০১৮ সালে এই পরিমাণ আড়াই কোটি ছাড়িয়েছে।
কিন্তু কেন রোহিঙ্গারা এই মাদক চক্রে জড়িয়ে পড়ছে? এ প্রসঙ্গে টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মতলব জানান, ‘এক সময় অভাবের তাড়নায় রোহিঙ্গারা ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছিল, এই কথা সত্য। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীরা রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এই কাজে তাদের ব্যবহার করেছে। তবে অনেক রোহিঙ্গা এখন খুচরো ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এমন খবর পেয়েছি।’ ওই রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে একমত পোষণ করে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত আবুল খায়ের বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে ইয়াবা পাচার বেড়েছে। কিছু স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী রোহিঙ্গাদের এই কাজে জড়িয়ে ফেলছে, এমন তথ্য আমরাও পেয়েছি। তবে এখন অনেক রোহিঙ্গা এই ইয়াবা ব্যবসা জড়িয়ে পরেছেন। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
তবে মাদক ব্যবসায় রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণে র্যা বের জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেন র্যাপপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যা ব-৭) টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব। তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর স্থানীয় অনেক ইয়াবা পাচারকারীও রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। যে কারণে শিবিরগুলোয় আমাদের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ইয়াবার পাচার বন্ধ করতে সীমান্তে র্যাহব সদস্যরা জীবন বাজি রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।’
কিন্তু তারপরও এই ইয়াবা ঢুকে পড়ছে ভারত ভূখণ্ডেও।