বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
নির্বাচনের প্রাক্ মুহূর্তেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে হাসিনা জানিয়েছিলেন, তাঁর দল আওয়ামি লিগ ফের জিতছে। বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের উপর আমার বিপুল আস্থা। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হব।’ তাঁর দাবি, ভোটের প্রচারে নেমে মানুষের মধ্যে যে ভালোবাসাটা দেখতে পেয়েছিলেন, তাতেই বুঝেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ অন্তর থেকে চাইছেন, আওয়ামি লিগ আবার ক্ষমতায় আসুক। কারণ জনগণ এটা জানেন, আওয়ামি লিগের মাধ্যমেই তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে। বিরোধীদের সম্পর্কে হাসিনা বলেছিলেন, ‘ওরা যখন ক্ষমতায় ছিল, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ না করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে। ওই টাকা এখন খরচ করছে দেশের ভিতরে অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে। জামাত গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। মেয়েদেরকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া থেকে ঘরবাড়ি দখল করেছিল। বিএনপি ওদের মনোনয়ন দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মানুষ শঙ্কিত।’ ভোটের ৪ দিন আগেও হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন, আসন্ন নির্বাচনে ৩০টি আসনে জয়লাভ করার মতোও সমর্থন নেই বিএনপির। এমনকী, বিদেশি সব সমীক্ষাই জানিয়েছিল, আওয়ামি লিগ জিততে চলেছে তাক লাগানো সংখ্যা নিয়েই। যদিও হাসিনার এই আত্মবিশ্বাস পাত্তা দিতে চায়নি বিরোধীরা। কিন্তু ফলপ্রকাশ শেষে দেখা গেল, বিপুল জনাদেশ নিয়ে ফের দেশের মসনদে বসতে চলেছে আওয়ামি লিগই।
আসলে লাগামছাড়া দুর্নীতি, বিপুল অর্থ তছরুপে খালেদা জিয়ার জেল, পাক গোয়েন্দাসংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে মাখামাখির খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কোমর ভেঙে গিয়েছিল বিএনপিসহ বিরোধীদের। মানুষ যে সমৃদ্ধি আর উন্নয়নের পক্ষে, তা মানতেই চায়নি বিরোধীরা। ফলে একাদশতম জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী জোট কোনও আঁচড়ও কাটতে পারেনি। ভোটে মুখ থুবড়ে পড়ে জনগণের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু সোমবার আওয়ামি লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেছেন, ‘এই নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ একটি সাম্প্রদায়িক শক্তির বিষদাঁত চিরতরে ভেঙে দিয়েছে এবং জামাত-যুদ্ধাপরাধী অপশক্তির হাত গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আমরা অভিভূত যে, বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে, স্বাধীনতার পক্ষে, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। এই বিজয়ের দিনে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বিজয় মিছিল না করতে। তাই কোনও বিজয় উল্লাস বা বিজয় মিছিল করা হবে না। আমরা মসজিদে, মন্দিরে, গির্জায় প্রার্থনা করব।’ আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতিশ্রুতি, ‘অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুল সংশোধন করে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করব। নতুন বছরে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখব।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনও কিছুতেই বিএনপির পরিকল্পনার ছিঁটেফোটাও ছিল না। ইস্তাহার প্রকাশ করেছে যেনতেনভাবে। নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগেও বিএনপির একাধিক নেতা তাদের নিশ্চিত ভরাডুবির পূর্বাভাস দিয়েছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ফাঁস হওয়া টেলিফোন কথোপকথনেও অন্তর্কোন্দল আর হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা একটি দলের মধ্যে যেমন মাটি কামড়ে পড়ে থাকা বা মরিয়া ভাব থাকার কথা, তার বিন্দুমাত্রও ছিল না। বিএনপির প্রার্থীদের অনেকে একদিনের জন্যও প্রচারে নামেননি। কোথাও কোথাও বিএনপি প্রার্থীদের পোস্টার লাগাতে দেওয়া হয়নি বা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, এই অভিযোগ সত্যি। আবার বিএনপির অনেক প্রার্থী পোস্টার ছাপেনইনি, সেটাও সত্যি। আওয়ামি লিগের এক নেতার কথায়, ‘পোস্টার না ছেপে যদি আপনি লাগাতে না দেওয়ার অভিযোগ করেন, প্রচার না চালিয়ে ঘরে বসে থাকেন, তাহলে কি ভূত এসে আপনার বাক্সে ভোট দেবে!’
বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচনের দিন কোনও কোনও কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আবার অনেক কেন্দ্রে বিরোধীরা এজেন্ট দেয়নি বা এজেন্ট দেওয়ার মতো লোক খুঁজে পায়নি। হয়রানির ভয়ে বিএনপির অনেক কর্মীই এজেন্ট হতে চাননি বা হলেও পরে পালিয়ে গিয়েছেন। বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের সব আয়োজন দেখে মনে হয়েছে, তারা নির্বাচনে নেমেছেন অভিযোগ করতে। লাগাতারভাবে তা করেছেও। তারা শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত অভিযোগ জানিয়ে বলেছিল, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কিন্তু পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তারা একবারও পরিষ্কার করে বলতে পারেনি, জিতলে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। তবে বিরোধীদের অভিযোগ যাই থাকুক না কেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ৭ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক। নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে সার্ক, ইসলামি সহযোগী সংস্থা— ওআইসি, ভারত ও নেপালের পর্যবেক্ষকরা। রাজনৈতিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ।
ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন তো নির্বাচনে প্রার্থীই হননি। তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ঐক্যফ্রন্ট জিতলেও তিনি কোনও দায়িত্ব নেবেন না। নির্বাচনের তিনদিন আগে সেই ড. কামাল এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, জামাত নেতাদের ধানের শিষ প্রতীক দেওয়া হবে জানলে তিনি ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্ব নিতেন না। আত্মবিশ্বাসী শেখ হাসিনার ঝলমলে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির পাশে ঐক্যফ্রন্টকে বড্ড ম্লান মনে হয়েছে। ‘এমন ছন্নছাড়া দলকে কেন ভোট দেব?’ বলছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।