নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া দাউদ ইব্রাহিমের ‘ডি’ কোম্পানির পাঠানো ভারতীয় জাল নোটের একটি ‘কনসাইনমেন্ট’ আটক করল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিস (ডিএমপি)। শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকার খিলাখেত থেকে ৫০ হাজার টাকার ভারতীয় জাল নোট সমেত এক মহিলাকে পাকড়াও করা হয়। এরপর ওই মহিলার বাড়িতে হানা দিয়ে আরও ৭ কোটি ৩৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ভারতীয় জাল নোট উদ্ধার করা হয়। বাড়ির একটি চোরাকুঠুরিতে বস্তার মধ্যে ভরা ছিল জাল নোটগুলি। ধৃত মহিলা ফাতেমা আখতার অপিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেপ্তার করা হয় বাংলাদেশের দাউদ নেটওয়ার্কের অন্যতম এজেন্ট শেখ মহম্মদ তালেবকে। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিসিটি) ওয়ালিদ হোসেন শনিবার জানিয়েছেন, পাকিস্তানে ছাপানো ওই জাল নোট শ্রীলঙ্কা হয়ে গত ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছিল। ৫০০টি বস্তায় ভরে মার্বেল এসেছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। তার মধ্যে ৯৫টি বস্তায় ভরা ছিল ভারতীয় জাল নোট। ওই বস্তাগুলিই উদ্ধার করা হয়েছে ফাতেমার বাড়ি থেকে। বাংলাদেশের নাগরিক এই মহিলার স্বামী পাকিস্তানের করাচির বাসিন্দা। তার সম্পর্কে আরও খোঁজখবর করা হচ্ছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, জেরায় ফাতেমা ও তালেব জানিয়েছে, চলতি মাসের ৩০ তারিখ এবং পয়লা ডিসেম্বর কয়েক দফায় ওই জাল নোটগুলি চাঁপাই নবাবগঞ্জ এবং রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ হয়ে ভারতীয় জাল নোট পাচারের পাকিস্তানি চক্রের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এনআইএ। নতুন এই মামলাটিও তাদের তদন্ত তালিকায় ঠাঁই পাবে বলে জানা গিয়েছে।
বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, এর আগে গত ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুবাই থেকে আসা একটি পণ্যবাহী জাহাজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ২ কোটি ৭২ লক্ষ টাকার জাল নোট। সেগুলিও পাকিস্তানের একটি অপরাধচক্র পাঠিয়েছিল। এবারও সেই চক্রই কনসাইনমেন্টটি পাঠিয়েছে। গোপন সূত্রে খবর আসে, খিলাখেত থানার অন্তর্গত বনরূপা আবাসনের সামনে শুক্রবার রাতে জাল নোটের কারবারীরা জড়ো হবে। সেই খবর অনুযায়ী ডিএমপি’র গুলশান বিভাগের পুলিস কর্মীরা সেখানে ওঁত পেতে থাকেন। গভীর রাতে সেখানে সন্দেহজনক গতিবিধির এক মহিলাকে দেখা যায়। মহিলা পুলিস কর্মীরা তাকে পাকড়াও করে। তার কাছ থেকে মেলে ভারতীয় জাল নোট। এরপর জেরা করে জানা যায়, দক্ষিণ খান থানার অন্তর্গত পণ্ডিতপাড়ায় মহিলার বাড়িতে মজুত করা রয়েছে বাকি জাল নোটগুলি। সেখান থেকে উদ্ধার হয় গোটা কনসাইনমেন্টটি। মহিলাকে জেরা করে জানা যায়, পাকিস্তান থেকে ডি কোম্পানির লোকজন তার স্বামীর মাধ্যমে ওই কনসাইনমেন্টটি পাঠিয়েছিল ডেমরা থানার সারুলিয়ার বাসিন্দা তালেবকে। তালেবই গত ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাল নোটগুলি নিয়ে আসে মহিলার বাড়িতে। গোয়েন্দারা বলছেন, মার্বেলের আড়ালে ওই কনসাইনমেন্টটি করাচি থেকে প্রথমে আসে শ্রীলঙ্কার হামবানতোতা বন্দরে। সেখান থেকে তা পাঠানো হয় চট্টগ্রাম বন্দরে।