বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
রাত সাড়ে ১১টা। ঘুমোতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল খোয়াই জেলার উত্তর রামচন্দ্রঘাটের ভিড় চৌমুহনীর শেওড়াতলি। এমন সময় চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয় প্রদীপ দেবরায়ের বাড়িতে। এলাকায় কুট্টি নামেই পরিচিত তিনি। প্রতিবেশীরা জানলায় উঁকি দিয়ে দেখেন শাবল হাতে দুই শিশুকন্যাকে কোপাচ্ছে সে। ঘরের এককোণে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে স্ত্রী মীনা। ভাই অমলেশ বাধা দিতে হলে একের পর এক কোপ পড়ে তার উপরও। বাড়ির বাকি সদস্যরা প্রাণভয়ে পালাতে শুরু করেন পড়শিদের বাড়িতে। এরপর আর কুট্টিকে ঠেকানোর ঝুঁকি দেখাননি কেউই। খবর দেওয়া হয় গ্রামের উপপ্রধানকে।
দুই মেয়ে ও ভাইকে খুন করে ততক্ষণে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছে উন্মত্ত কুট্টি। ফের শুরু হয় শাবল হাতে তাণ্ডব। ভিড় চৌমুহনীতে এসে অটো রিকশা দাঁড় করিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে চালক ও আরোহীকে। পুলিস জানিয়েছে, শাবলের আঘাতে গুরুতর জখম হন কৃষ্ণ দাস (৫৪) ও করণবীর দাস। সম্পর্কে তাঁরা বাবা-ছেলে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কৃষ্ণবাবুর। খোয়াই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন চালক করণবীর।
উপপ্রধান ও গ্রামবাসীদের থেকে খবর পেয়ে কুট্টিকে সামলাতে ঘটনাস্থলে আসেন খোয়াই থানার সেকেন্ড অফিসার সত্যজিৎ মল্লিক। সঙ্গে লাঠি হাতে দুই কনস্টেবল। কিন্তু রেহাই পাননি পুলিস অফিসার। তাঁর মাথায় শাবলের ঘা পড়তেই পালায় দুই কনস্টেবল। জ্ঞানহীন সত্যজিৎকে মাটিতে ফেলে কোপাতে থাকে কুট্টি। পরে বিশাল পুলিসবাহিনী এসে নিরস্ত্র করে কুট্টিকে। আটক করে নিয়ে আসা হয় খোয়াই থানায়। সেখানে গ্রেপ্তার করা হয় কুট্টিকে। জখম সত্যজিৎকে নিয়ে আসা হয় খোয়াই হাসপাতালে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ার স্থানান্তরিত করা হয় আগরতলার জিবি হাসপাতালে। সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর। জেলা পুলিশ সুপার কিরণ কুমার বলেন, ‘পরিবারের কারও সঙ্গেই কথাবার্তা বলত না প্রদীপ দেবরায়। পাঁচজনকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করেছে সে। তাকে ১৪ দিনের জেলা হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।’ রামচন্দ্রঘাটের এসডিপিও রাজীব সূত্রধর জানান, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে।’
পুলিস মহলে নিষ্ঠাবান অফিসার বলেই পরিচিত ছিলেন বছর বিয়াল্লিশের সত্যজিৎ। বাড়ি ইন্দ্রনগরে। স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় জিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁর স্ত্রীকে। আর তাঁদের পাঁচ বছরের সম্তানকে সামলাতে ব্যস্ত প্রতিবেশীরা। তেরঙ্গায় জড়ানো সত্যজিতের কফিনবন্দি দেহ বাড়িতে আসতেই ভেঙে পড়ে গোটা ইন্দ্রনগর। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে আসেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। প্রতিশ্রুতি দেন, নিহত পুলিস অফিসারের স্ত্রীকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে
এবং তাঁর সন্তানের পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার। এরপর খোয়াই জেলা পুলিসের তরফে গান স্যালুটে বিদায় জানানো হয় সত্যজিৎকে। বটতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সেখানে গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানায় ত্রিপুরা পুলিস। কান্নায় ভেঙে পড়েছে নিহত পুলিস অফিসার সত্যজিৎ মল্লিকের পরিবার। -নিজস্ব চিত্র