গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
কিন্তু সেই ‘মৃত’ ছেলেই সাড়ে চার দশক পর মাথাভর্তি পাকা চুল, সাদা গোঁফ-দাঁড়ি নিয়ে শনিবার আচমকা এসে দাঁড়ালেন ৯১ বছরের মায়ের সামনে। অশক্ত শরীর, চোখে ভাল করে দেখতে পান না মা ফতেমা বিবি। কিন্তু হাতের স্পর্শে ৭০ বছরের বৃদ্ধ সাজ্জাদকে চিনে নিতে এতটুকু সময় লাগেনি তাঁর। মুহূর্তে জড়িয়ে ধরেছেন ছেলেকে। মাথায় বিলি কেটে দিয়েছেন। দু’জনেই বাকরুদ্ধ। শুধু দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়েছে জলের ধারা।
দক্ষিণ কেরলের কোল্লামের গোটা শাসথামকোট্টা গ্রাম তখন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ওই দৃশ্য দেখার জন্য। বিস্ময়ভরা চোখে অনেকেই বলেছেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়। আর অনর্গল কান্না শেষে ছেলেকে মিষ্টিমুখ করাতে করাতে ফতেমা বিবি শুধু একটিই কথা বলেছেন, ছেলেকে ফিরে পাওয়ার মতো সুখ আর কিছুতে নেই যে বাবা। আবেগ সামলাতে না পেরে মায়ের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে সাজ্জাদ বলেছেন, তোমায় ছেড়ে আর কোথাও যাব না। আর তারপরই চেনা উঠোন, পুকুর পাড়, অগোছালো ঘরের হারানো সুঘ্রাণে বুঁদ হয়ে গিয়েছেন সাজ্জাদ। তবে সব ফিরে পেয়েও একটাই আক্ষেপ ঘরে ফেরা ছেলের। বাবাকে দেখতে পেলেন না। ন’বছর আগেই তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে সিনেমার ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ করতেন সাজ্জাদ। দক্ষিণী অভিনেত্রী রানি চন্দ্রকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে দলের আরও কয়েকজন ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ১২ অক্টোবর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের আবু ধাবি থেকে মাদ্রাজ ভায়া মুম্বই বিমানে ফেরেন টিমের প্রত্যেকেই। ওই বিমানেই ফেরার কথা ছিল সাজ্জাদেরও। কিন্তু অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির সঙ্গে বিতণ্ডার জেরে শেষ মুহূর্তে তিনি ওই বিমানে ফেরার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। এদিকে, মুম্বই থেকে চেন্নাই যাওয়ার পথে ইঞ্জিনে আগুন ধরে গিয়ে মাঝ আকাশে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে বিমানটি। অভিনেত্রী সহ ৯৫ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। খবর ছড়িয়ে পড়তেই সবাই ধরে নেন, বাকিদের সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে সাজ্জাদেরও। কারণ, বারবার খুঁজেও বিমানের বেঁচে থাকা যাত্রীর তালিকায় সাজ্জাদের নাম দেখতে পায়নি তাঁর পরিবার।
এদিকে, বিমান দুর্ঘটনার খবর শুনেই ট্রমায় আক্রান্ত হন সাজ্জাদ। মানসিক অসুস্থতাও দেখা দেয়। পরে একসময় মুম্বই ফেরেন তিনি। কিন্তু জীবনে কিছু করে উঠতে না পারার হতাশায় বাড়ি ফেরার কথা ভাবেননি। বরং একটা কাজ জুটিয়ে বাণিজ্য নগরীতেই থেকে যান। কিন্তু ভুলতে পারেননি ওই বিমান দুর্ঘটনায় সহকর্মী, বন্ধুদের হারানোর শোক। ফলে ধীরে ধীরে তাঁর মানসিক অসুস্থতা বাড়তে থাকে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে কে এম ফিলিপ বলেন, ২০১৯ সালে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় রাস্তা থেকে সাজ্জাদকে উদ্ধার করেন তাঁরা। শুরু হয় চিকিৎসা।
সম্প্রতি সাজ্জাদের পরিবারের খোঁজ মেলে। তারপরই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হারানো ছেলেকে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়। সাজ্জাদরা তিন ভাই ও চার বোন। ‘মৃত’ দাদাকে ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি তাঁরা।