সাহারানপুর: ব্যস্ত দিল্লি-মিরাট রোড ধরে হেঁটে চলেছেন এক যুবক। নাম প্রবীণ কুমার। চারদিন ধরে এভাবেই হাঁটছেন তিনি। গন্তব্য ২০০ কিলোমিটার দূরের সুপ্রিম কোর্ট। উদ্দেশ্য সুবিচার পাওয়া। ওই যুবক উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী হামলার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিসের সন্ত্রাসদমন শাখা (এটিএস)। এছাড়াও নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধে নাম ভাঙিয়ে ইসলামে ধর্মান্তরকরণের একটি চক্র চালানোর অভিযোগও আনা হয়েছে। শুধু সন্দেহের বশে তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এই হয়রানি থেকে ‘মুক্তি’ পেতে তিনি এবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। নিজের গ্রাম সাহারানপুর থেকে হেঁটেই সুপ্রিম কোর্টের পথে পাড়ি দিচ্ছেন প্রবীণ। সম্বল বলতে একটি ট্রলি ব্যাগ ও জলের বোতল। গত মাসে ধর্মান্তরকরণের একটি চক্রের পর্দাফাঁস করে উত্তরপ্রদেশ এটিএস। ওই চক্রের সঙ্গে ভুলবশত নাম জড়ায় প্রবীণের। অভিযোগ, তিনি নাকি বিদেশ থেকে আসা অর্থ কাজে লাগিয়ে ইসলামে ধর্মান্তরকরণের একটি চক্র চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদী হামলারও ছক কষেছেন। সূত্রের খবর, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করেছেন। ওই বইতে প্রধানমন্ত্রী ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে দেশ ও রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, সেই কথাই উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, সামাজিক ঐক্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বইতে তুলে ধরেছেন তিনি। সহারানপুরের একটি কলেজ থেকে স্নাতক ওই যুবক। তাঁর দু’টি সন্তান রয়েছে। আক্ষেপের সঙ্গে প্রবীণ কুমার বলেন, ‘পুলিসের বিশ্বাস, আমি নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে যুক্ত রয়েছি। আমাকে পুলিস যা জিজ্ঞাসা করেছে, তার সঠিক উত্তর দিয়েছি। কিন্তু আমাকে আটকে রাখার মতো কোনও প্রমাণ না পেয়ে পুলিস আমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।’ উত্তরপ্রদেশ পুলিসের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘গত মাসে দিল্লির জামিয়া নগর থেকে ধর্মান্তরকরণের মূল পাণ্ডা উমর গৌতমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই ঘটনার তদন্তে প্রবীণের নাম উঠে আসে। তাঁকে রুটিন মাফিক জেরা করা হয়েছে। আবার ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।’ তবে পুলিসের এই হেনস্তা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয় ওই যুবক। পুলিস ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে গ্রামবাসীরা তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছেন। এমনকী ‘পাকিস্তানি মুসলিম’ আখ্যা দিয়ে একটি হুমকি চিঠিও তাঁর বাড়িতে এসেছে। তিনি পুরো ঘটনার জন্য পুলিস প্রশাসনকে দায়ী করেছেন। গত মঙ্গলবার প্রতিকার চেয়ে জেলাশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন তিনি। এবার প্রতিকার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন তিনি। দেশের শীর্ষ আদালত সঠিক বিচার দেবে বলে আশা প্রবীণের।