কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
সকাল তখন ১০টা ৪৫ মিনিট। উত্তরপ্রদেশের মুজফফ্রনগরের জেলা হাসপাতালের লোহার মূল গেট বন্ধ। রোগী ভর্তির কোনও আর্জিতে কর্ণপাত করছে না কর্তৃপক্ষ। অ্যাম্বুলেন্সের ভিতর প্রবল শ্বাসকষ্টে প্রাণ যায় যায় অবস্থা রোগীদের। অসহায় পরিজনদের ছোটাছুটি। কোথাও কোনও সুরাহা মিলছে না।
হাসপাতালের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্সের দরজা খোলা। ভিতরে স্ত্রীর হাত জাপটে ধরে কোনওরকমে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছেন এক ব্যক্তি। হাসপাতালের নার্সকে উদ্দেশ্য করে স্ত্রীর আর্তচিৎকার—কোথায় যাব আমরা? নার্সের উত্তর, ‘এখানে কোনও জায়গা নেই। আমরা কী করতে পারি?’ কোভিড মহামারীর এ এক মর্মান্তিক দৃশ্য!
শুধু মুজফফ্রনগরের জেলা হাসপাতালই নয়, জেলার প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছবিটা একই। পরিস্থিতি সামলে উঠতে হিমশিম অবস্থা স্বাস্থ্যকর্মীদের। কোভিডের আইসোলেশন ওয়ার্ডগুলিতে পরিষেবা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। কোথাও চিকিৎসকের কাজ করছেন নার্সরা। কোথাও আবার ওয়ার্ডবয় নার্সের ভূমিকায়। কোথাও কোথাও আবার রোগীর বাড়ির লোকেরাও হয়ে উঠছেন ‘স্বাস্থ্যকর্মী’। স্বজনদের বাঁচাতে ওয়ার্ডবয়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাঁরা। একটু অক্সিজেনের জন্য হাসপাতালের ভিতরে-বাইরে ছুটতে হচ্ছে তাঁদের। কোথাও কোনও সিলিন্ডার জুটছে না! অসহায়ের মতো কপাল চাপড়াচ্ছেন রোগীর বাড়ির লোকেরা।
গত কয়েকদিনে কোভিডের দৌরাত্ম্যে কার্যত ধরাশায়ী মুজফফ্রনগর। লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সংক্রমণের লেখচিত্র সাত হাজারের ঘর ছুঁইছুঁই। একদিনে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। এখন পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৩। রোগীদের চাপে সম্পূর্ণ বেহাল গোটা জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবা। প্রতিটি হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সের সারি। যেটুকু চিকিৎসা জুটছে সেটা অ্যাম্বুলেন্সেই। সেখানে চালকই ‘চিকিৎসক’!
যেমন, রাহুল কুমার। এদিন কোভিডের উপসর্গ থাকা এক রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে হাসাপাতালে এনেছেন তিনি। ভর্তি নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা কমতে কমতে ৭৭-এ নেমে গিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সের সিলিন্ডারেও অক্সিজেন শেষ। রাহুল বলছিলেন, ‘সেই আলমাসপুর থেকে আসছি। বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে অক্সিজেন দিতে হয়েছে রোগীকে। এখন কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না। বড্ড অসহায় লাগছে!’ রোগীকে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা দিতে নিজেই গিয়েছিলেন নার্সের কাছে। ভর্তির অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু কোভিড রিপোর্ট না থাকলে ভর্তি কিংবা চিকিৎসা কোনওটাই করা সম্ভব নয়—বলেই মুখের উপর হাসপাতালের দরজা বন্ধ করে দেন নার্স। অগত্যা নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন রাহুল। আর রোগীর পরিজনকে আশ্বস্ত করে বলছেন, ‘আমি রয়েছি আপনাদের সঙ্গে। চিন্তা করবেন না।’