সমৃদ্ধ দত্ত ,নয়াদিল্লি : প্রবল অস্বস্তিতে পড়ল কেন্দ্রীয় সরকার। নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিল, পাঁচ ভোট-রাজ্যে ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি রাখা যাবে না। আর অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নির্দেশিকা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকেও। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু, অসম, পুদুচেরিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর যে সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে, তাতে মোদির ছবি রাখা চলবে না। কারণ কমিশন মনে করে, এটা আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী। সম্প্রতি ঠিক এই অভিযোগই তৃণমূল করেছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে। তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপির পক্ষে প্রধান প্রচারক। সেক্ষেত্রে তাঁরই ছবি যদি ভ্যাকসিন সার্টিফিকেটে থাকে, তা ভোটারদের প্রভাবিত করার সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা। অবিলম্বে এই ছবি সরিয়ে দেওয়া উচিত। এরপরই নির্বাচন কমিশন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। গণটিকাকরণ যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প এবং নির্বাচন ঘোষণার আগেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ ডিজিটালি খসড়া সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে কমিশনকে জানিয়েছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কিন্তু তা মেনে নেয়নি কমিশন। নিজেদের মধ্যে বৈঠকের পর কেন্দ্রকে তারা জানিয়ে দিয়েছে, অন্য কোনও ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, শংসাপত্রটি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রককে এমন কোনও পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে এই প্রক্রিয়া এড়ানো যায়। সেই মতোই স্থির হয়েছে, দেশের সর্বত্র ভ্যাকসিনের শংসাপত্রে প্রধানমন্ত্রীর ছবি থাকলেও, পাঁচ ভোট-রাজ্যকে তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এই নির্দেশ পাওয়ার পর মন্ত্রককে এমনভাবেই সার্টিফিকেট ফিল্টার করতে হবে, যাতে পাঁচ রাজ্যে এই শংসাপত্রে প্রধানমন্ত্রীর ছবি বাদ যায়। এই ব্যবস্থা চালু করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
এই প্রথম নয়। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেবারও অভিযোগ উঠেছিল, নির্বাচন চলাকালীন প্রচারে প্রধানমন্ত্রী যেখানে স্টার প্রচারক, সেখানে কেন সরকারি জনস্বার্থ প্রকল্পের ওয়েবসাইটে মোদি এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের ধবি শোভা পাচ্ছে? ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালেও সরকারি সেই ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দিতে হয় মোদির ছবি।
উল্লেখ্য, নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক ইস্যুতে কেন্দ্র এবং কমিশনের সঙ্গে তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের বিরোধ শুরু হয়েছে। এবং রাজনৈতিক মহল বলছে, শুরুতেই তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে গেল। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার পরও শুক্রবার কমিশনের একরাশ সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর দাবি, কমিশনের উচিত নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন মনোভাব নেওয়া। সবথেকে বড় যে অভিযোগ তৃণমূল করেছে সেটি হল, গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঁচ রাজ্যে ভোট হচ্ছে, অথচ একমাত্র বাংলায় আট দফার ভোট। আর কোনও রাজ্যেই এভাবে এক মাসের বেশি সময় ধরে ভোট হচ্ছে না। আশঙ্কা করা হচ্ছে ভোটপর্ব যতই এগিয়ে আসবে, রাজ্য তথা তৃণমূল ও কমিশনের সংঘাতও ক্রমেই বাড়বে।