কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
কেন্দ্রের সমালোচনা করলেই জোটে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’র তকমা! নরেন্দ্র মোদি জমানায় এই অভিযোগ নতুন নয়। সেই বিতর্কে আবারও কার্যত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষেই দাঁড়াল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) সাংসদ ফারুক আবদুল্লার বিরুদ্ধে একটি আবেদনের শুনানিতে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘সরকারের নেওয়া কোনও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মতপোষণ করলেই তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলা যায় না।’ অর্থাৎ, ঘুরিয়ে কেন্দ্রেরই সমালোচনা করল আদালত। সেই সঙ্গে ওই আবেদন খারিজ করে মামলাকারীদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছে বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কাউল এবং বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তর বেঞ্চ।
এর আগে ২০১৬ সালেও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অপব্যবহার রুখতে করা একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে একই ধরনের মন্তব্য করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই পর্যবেক্ষণ ছিল মোদি সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার দু’বছর পর, ২০১৬ সালে। তার আগে জেএনইউ কাণ্ডে ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমার থেকে অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খোলায় আমির খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে স্পষ্ট জানানো হয়, কোনও বিষয় আদৌ রাষ্ট্রদ্রোহ কি না, সেব্যাপারে শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চের নির্দেশ মেনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কাকতালীয় হলেও এবার প্রায় একই পর্যবেক্ষণ শোনা গেল দ্বিতীয় মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মধ্যে। এই সময়েও ৩৭০ ধারা থেকে হালের কৃষক আন্দোলন—রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েই চলেছে।
২০১৯ সালের আগস্টে সংবিধানের ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পর এক বছরেরও বেশি সময় গৃহবন্দি রাখা হয়েছিল ফারুক আবদুল্লাকে। গত বছর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই সময় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে চীনের সাহায্যে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ফেরার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এই কথায় ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার গন্ধ’ পেয়ে সরব হয়েছিল বিজেপি। পরে বিশ্ব গুরু ইন্ডিয়া ভিশন অব সর্দার প্যাটেল সংস্থার রজত শর্মা ও ডঃ নেহ শ্রীবাস্তব এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কাশ্মীরকে চীনের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ভারতীয় সংবিধানের ১২৪-এ ধারায় তাঁর বিচার করা হোক। আবেদনে আরও বলা হয়েছিল, বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র জানিয়েছেন, রাজ্যে ফের ৩৭০ ধারা চালু করার জন্য চীনের সঙ্গে হাত মেলানোর ব্যাপারে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট যদিও ফারুকের ওই মন্তব্যে আপত্তিকর কিছু দেখেনি। আদালত আরও জানিয়েছে, ফারুকের বিরুদ্ধে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছেন আবেদনকারীরা। তাই মামলা খারিজের পাশাপাশি আবেদনকারীদের জরিমানা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-এ ধারা অনুযায়ী, মন্তব্যে, ইঙ্গিতে বা অন্য ভাবে বৈধ সরকারের অবমাননা, হিংসা, ঘৃণা বা অসন্তোষ ছড়াতে চাইলে জরিমানা-সহ তিন বছর পর্যন্ত জেল বা যাবজ্জীবন হতে পারে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আইনটি বরাবর বিতর্কে থেকেছে।