নয়াদিল্লি, ১৬ জানুয়ারি (পিটিআই): দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান। অবশেষে আজ, শনিবার টিকাকরণ কর্মসূচির সূচনা করলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অবশেষে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন দেশবাসী। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় দেশজুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেল এই টিকাকরণ কর্মসূচী। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালে প্রকল্পের সূচনার পরই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বিজ্ঞানীদের দরাজ প্রশংসা করে বলেন, বৈজ্ঞানিকদের দিনরাতের পরিশ্রমের ফলেই এসেছে এই সাফল্য। এরজন্য অবশ্যই তাঁদের প্রশংসা এবং ধন্যবাদ প্রাপ্য। আমাদের সৌভাগ্য যে এত কম সময়ের মধ্যেই আমাদের হাতে জোড়া ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে। তবে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও সুরক্ষা নিয়ে অনেকেরই মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। তা উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হওয়া উচিত নয়। গুজবে কান দেবেন না। এই ভ্যাকসিন সুরক্ষিত। বিজ্ঞানীদের উপরে ভরসা রাখুন। এদিন বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ প্রকল্পের উদ্বোধনের ফলে প্রথম দিনই মোট তিন লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। এরজন্য ৩০০৬ সেন্টারে টিকাকরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রযুক্তিতে সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি হয়েছে কোভিশিল্ড। অন্যদিকে ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন। এই দু’টি প্রতিষেধক নিয়েই দেশে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তবে টিকাকরণ শুরু হলেও মোদি জানান, আগের মতোই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোভিড বিধি বজায় রাখতে হবে। মাস্ক ব্যবহার এবং শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনে চলায় কোনও ঢিলেমি দেওয়া চলবে না। যথারীতি স্যানিটাইজও করতে হবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এখন জরুরি পরিষেবায় আত্মনির্ভর। খুব কম সময়ের মধ্যেই দুটি মেড ইন ইন্ডিয়ার ভ্যাকসিন পাওয়া গিয়েছে। যাঁর আগে দরকার, তাঁকেই টিকা দেওয়া হবে। প্রথম দফায় স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা আগে টিকা পাবেন। যার আওতায় রয়েছেন সাফাইকর্মী থেকে শুরু করে ডাক্তার ও নার্স সহ অন্যান্যরা। এরপর জরুরি পরিষেবা ও দেশের সুরক্ষার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত আছেন, তাঁরা টিকা পাবেন। সেই তালিকায় আছেন সেনা, সুরক্ষা বল, পুলিস, দমকলর্মী, পুর ও পঞ্চায়েত সাফাইকর্মীরা।সবমিলিয়ে মোট সংখ্যা ৩ কোটির কাছাকাছি। দ্বিতীয় দফায় টিকা দেওয়া হবে ৩০ কোটি মানুষকে। ধাপে ধাপে সবাইকেই টিকা দেওয়া হবে। ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ রয়েছে। প্রথম ডোজের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। কারণ, দ্বিতীয় ডোজের ২ সপ্তাহ পর আমাদের দেহ করোনা প্রতিরোধী হয়ে উঠবে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, টিকাকরণে ‘কোউইন’ নামের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। প্রতিষেধক নেওয়ার আগে সেটিতে নাম ও পরিচয় নথিভুক্ত করতে হবে প্রত্যেককে। এছাড়াও কত প্রতিষেধক মজুত রয়েছে? প্রতিষেধকের জন্য কত ডিগ্রি তাপমাত্রা আদর্শ? কত জন প্রতিষেধক নিলেন এবং প্রতিষেধক গ্রহণের পর তাঁদের শরীরে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে? এই অ্যাপের মাধ্যমেই সেইসব বিষয়ে নজর রাখা হবে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার একটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে প্রতিষেধক সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যও জানা যাবে।
আজ সকালে গোটা দেশের পাশাপাশি এরাজ্যেও শুরু হয়ে গিয়েছে করোনার টিকাকরণ। এদিন সকালে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিব পিজি-তে হাজির হন। টিকাকরণ সংক্রান্ত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। সেখান থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, আজ মুক্তির দিন। এতদিন মানুষ ভয়ে ভয়ে ছিলেন। সেই আশঙ্কা থেকে আজ মুক্ত হল মানুষ। অন্যদিকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় চূড়ান্ত তৎপরতায় চলছে টিকাকরণ। জানা গিয়েছে, প্রথম দফায় রাজ্যের প্রতিটি টিকাকেন্দ্রে ১০০ জন করে স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। টিকাকরণের পর দেওয়া হবে একটি কার্ড। সেই কার্ড দেখেই এক মাস পর ফের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।