পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
একটা সময় ছিল কাশ্মীরের পশমের পোশাক মানেই আর্তুগ্রুল অলঙ্কারে সাজানো। উৎসব, বিয়ে সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে এটিই ছিল কাশ্মীরিদের অহঙ্কার। পর্যটকদের কাছেও ব্যাপক সমাদৃত। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ তো আর ঐতিহ্যের পরম্পরা মানে না! যেদিন থেকে ভূস্বর্গে সে রক্তচক্ষু দেখাতে শুরু করল সেই থেকে ‘বিলুপ্তপ্রায় অলঙ্কার’-এর তালিকায় নাম উঠল আর্তুগ্রুলের। টানা চল্লিশ বছর এভাবেই কেটেছে। ২০১৯ সালের আগস্ট। কাশ্মীরকে বদলে দিল ‘দিরিলিস: আর্তুগ্রুল’ সিরিজ। জঙ্গি নাশকতার দৃশ্য ভুলে বিনোদনের এক অন্য স্বাদ পেলেন আম-কাশ্মীরি। টানা প্রায় আড়াই মাসের ঘরবন্দি জীবনেও সবার চোখ গেঁথে ছিল টিভিতে। তারপর থেকে ভূস্বর্গে কান পাতলে একটাই কথা—‘আমি আর্তুগ্রুলের ডাই-হার্ড ফ্যান।’
কিন্তু কে এই আর্তুগ্রুল? তাঁকে নিয়ে এত উন্মাদনা কেন? অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান প্রথম ওসমানের বাবার নাম আর্তুগ্রুল। তাঁর নামানুসারে ‘দিরিলিস: আর্তুগ্রুল’ আসলে মুসলিম ওঘুজ তুর্কিদের বীরকাথা কাহিনী অবলম্বনে অ্যাডভেঞ্চার সিরিজ। ত্রয়োদশ শতকে বাইজেন্টাইন যুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি। নেটফ্লিক্স, ইউটিউবের যুগে পশ্চিমী দুনিয়ার সীমানা টপকে উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় নেয়নি সিরিজটি। বহু ঐতিহাসিক মনে করেন, বিতর্ক থাকলেও আপামর কাশ্মীরিরা ভালোবেসে ফেলেছেন তুর্কিদের বীরযোদ্ধাকে। সিরিয়ালের কিছু ঘটনার সঙ্গে কাশ্মীরের পটভূমিরও মিল রয়েছে। আর্তুগ্রুলের ন্যায়যুদ্ধকে তাঁরা আবেগ-অনুভূতিতে ঠাঁই দিয়েছেন। খুব কম সময়েই।
আর সেই সিরিজই কাশ্মীরে ফিরিয়ে এনেছে ‘আর্তুগ্রুল ক্যাপ’কে। লোকশিল্পের ঐতিহ্য ফেরাতে ভিড় উপচে পড়ছে প্রতিটি জুয়েলারি দোকানে। চাহিদা-জোগানের সামঞ্জস্য রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। শ্রীনগরের পোলো ভিউয়ের একটি জুয়েলারি দোকানের মালিক মুবাসির কাঠোয়ারি বলছিলেন, ‘আর্তুগ্রুল ক্যাপ’ এখানে প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। চলতি বছরের গোড়াতে দু’একজন খদ্দের এসে এই অলঙ্কারের খোঁজ করতেন। আমরাও একটু সময় নিয়ে বানিয়ে দিতাম। এখন অর্ডার নিতেই পারছি না। সবাই এসে বলছেন— ‘আর্তুগ্রুল ক্যাপ’ চাই। কতজনের আর চাহিদা মেটাব! তৈরি করার শিল্পী পাচ্ছি না। এই হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা এখন অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন।’ দৌকান-ই সঙ্গীন এলাকার জুয়েলারি দোকানদার ফারুখ কিতাবা কিংবা ওল্ড সিটির ব্যবসায়ী ফতেহ কাদাল আবার আর্তুগ্রুল সিরিজের নির্মাতাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। জানাবেন নাই বা কেন! তুর্কি সিরিজের সৌজন্যেই যে হাল ফিরেছে কাশ্মীরের অলঙ্কার শিল্প-বাণিজ্যে।