বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এই শ্রাবণ মাসে এরকম ফাঁকা সরযূ নদী কে দেখেছে? রাম কি পৌড়িতে চলছে না দিনভরের অনর্গল হনুমান চালিশা অথবা কথকতার আসর! সারি দিয়ে মানুষ চলেছেন হনুমান গড়হির দিকে, এটাই তো টেরি বাজার চৌরাহায় চেনা দৃশ্য। অথচ বুধবার সেই চিত্র ছিল অনুপস্থিত। রামজন্মভূমি মোড় থেকে তুলসীদাস উদ্যানের দু’দিকে সারিবদ্ধ দোকানের ব্যস্ততা উধাও। অযোধ্যা নগরীর ৫০০ বছরের চড়াই-উতরাইয়ের ইতিহাস। সেখানে সবথেকে মাহাত্ম্যপূর্ণ এই ক্ষণে জনসমুদ্রই ছিল প্রত্যাশিত। আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করা জয়ধ্বনি, লক্ষ মানুষের আগমনই ছিল স্বাভাবিক দৃশ্য। একদিকে করোনা এবং অন্যদিকে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় বহু প্রতীক্ষিত রামমন্দিরের ভূমিপুজো স্থল এবং পার্শ্ববর্তী গোটা এলাকা ছিল শুনশান। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অযোধ্যায় এসেছিলেন কয়েক হাজার ভক্ত, পুণ্যার্থী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ অযোধ্যায় ছিলেন, সরযূ তীর, হনুমান গড়হি, জন্মভূমিস্থল আর তুলসী উদ্যানে ছিল ‘প্রবেশ নিষেধ’। তিনি ফিরতেই খুলে গেল দ্বার। পুণ্যকামী মানুষ দখল নিল সরযূ ও জন্মভূমির করিডর।
চিরতরে অপ্রকট হওয়ার আগে ভক্ত হনুমানকে অযোধ্যা রক্ষার ভার দিয়ে গিয়েছিলেন রামচন্দ্র। তাই রীতি হল, রাম জন্মভূমিতে রামলালাকে দর্শনের আগে হনুমান গড়হি মন্দিরের ৫৬টি সিঁড়ির ধাপ পেরোতে হবে। পুজো দিয়ে হনুমান-মাতা অঞ্জনা দেবীর অনুমতি নিতে হবে। সেটাই করলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ১৫ মিনিট হনুমান গড়হিতে পুজো ও পরিক্রমার পর সোজা জন্মভূমিস্থল। পূর্ণাঙ্গ পুজোপাঠ করলেন তিনিই। ছিলেন যোগী, মোহন ভাগবত, রাম জন্মভূমি ন্যাসের মহন্ত নৃত্যগোপাল দাস। ভূমিপুজোয় কিন্তু ভরকেন্দ্র ছিলেন মোদিই। পুরোহিত পুজো উপচারের মধ্যেই আপ্লুত আবেগে মোদিকে বললেন, ‘প্রভু রাম ও সীতামাতার অশেষ কৃপা যে, আপনার মতো সুপুত্রের মাধ্যমে অবশেষে মন্দিরের সূচনা হল।’ তসর আর গরদের ধুতি-পাঞ্জাবিতে আভূমি প্রণত হয়ে রামলালাকে প্রণাম করলেন প্রধানমন্ত্রী। ৪০ কেজি ওজনের পাঁচটি রুপোর ইট প্রোথিত করলেন মাটিতে। শিলান্যাসের পর মোদি বললেন, আজকের দিনটি স্বাধীনতার আন্দোলনের সঙ্গে তুলনীয়। বহু মানুষ এই দিনটির জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন। রামমন্দিরকে ভারতের রাষ্ট্রীয় ঐক্যের প্রতীক বলে অভিহিত করেন তিনি।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদের অবলুপ্তি ঘটিয়েছিলেন তিনি। আর ২০২০’র ৫ আগস্ট সূচনা করলেন রামমন্দিরের। তাঁর হাতে রয়েছে আরও তিনটি ৫ আগস্ট। পরবর্তী পদক্ষেপ কি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি? সেটা বাস্তবায়িত হলে? হিন্দুত্ব রাজনীতির আইকন থাকবেন একজনই— নরেন্দ্র মোদি!