শত্রুরা পরাভূত হবে। কর্মে পরিবর্তনের সম্ভাবনা। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের জন্য ব্যয়-বৃদ্ধির যোগ আছে। কোনও ... বিশদ
পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তার মৃত্যুর খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য পুলিসের এক গোয়েন্দা কর্তা। যদিও খাইবার পাখতুনওয়ার ঠিক কোথায় এবং কবে আমির রেজা খান মারা গিয়েছে, নির্দিষ্ট করে তা জানাতে অস্বীকার করেছেন সেই গোয়েন্দা কর্তা। বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত যোগাযোগের ভিত্তিতে জানতে পেরেছি, পাকিস্তানের তালিবান অধ্যুষিত কোনও প্রদেশে হঠাত্ এক হামলায় মৃত্যু হয়েছে কলকাতার এই জঙ্গির।’
বেনিয়াপুকুরের ১৬, মফিদুল ইসলাম লেনের বাসিন্দা ছিল আমির। ইয়াসিন ভাটকলের সঙ্গে মিলে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের (আইএম) প্রতিষ্ঠা করেছিল সে। ২০০২ সালের ২২ জানুয়ারি মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে কলকাতার প্রথম জঙ্গি হামলার মূল চক্রী এই আমির। খাদিম কর্তা পার্থ রায়বর্মনের অপহরণও তার মস্তিষ্কপ্রসূত। দীর্ঘদিন করাচিতে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) ছত্রচ্ছায়ায় ছিল আমির। তবে গত তিন-চার বছর ধরে আইএম-এর সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে প্রথমে তালিবান এবং ইদানীং ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সে। পাকিস্তানের ফেডারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটেড ট্রাইবাল এরিয়ায় (ফাটা) আমিরের গতিবিধি শেষবার নজরে আসে ভারতীয় গোয়েন্দাদের।
জয়েশ এবং লস্করের মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল আমিরের দাদা আসিফ রেজা খান। পাকিস্তান থেকে গুজরাত উপকূলে বিস্ফোরক-অস্ত্র পাচার এবং দুই হীরে ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে পুলিস হেফাজত থেকে পালানোর সময় গুলিতে মৃত্যু হয় আসিফের। দাদার মৃত্যুর বদলা নিতে কলকাতারই বাসিন্দা আরও কয়েকজন যুবককে নিয়ে আমির তৈরি করেছিল আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্স। জঙ্গি কার্যকলাপের সেই শুরু। সংগঠনে তার ছদ্মনাম ছিল কখনও রিজওয়ান, আবার কখনও পারভেজ। ইদানীং মুত্তাকি নাম নিয়েছিল সে। কলকাতায় আমিরের তৎপরতা শেষবারের মতো গোয়েন্দা রেডারে এসেছিল ২০১০ সালে। দক্ষিণ কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে ফোন করে ৫০ কোটি টাকা দাবি করেছিল সে।
গোয়েন্দারা বলছেন, কলকাতার দু’টি মামলার পাশাপাশি মুম্বইতে লোকাল ট্রেনে নাশকতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিস্ফোরণে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ছিল আমির। দাউদ ইব্রাহিম সহ যে ৫০ জন জঙ্গির তালিকা দিয়ে ‘ইন্ডিয়াস মোস্ট ওয়ান্টেড’ তৈরি হয়েছিল তাতেও ছিল বেনিয়াপুকুরের এই ৪২ বছরের বাসিন্দার নাম। ছিল ইন্টারপোলের ‘রেড কর্নার’ নোটিসও। কলকাতা থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া এই জঙ্গিকে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন কলকাতা পুলিসের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স, উত্তরপ্রদেশ এবং গুজরাতের অ্যান্টি-টেররিস্ট সেল, দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চ এবং এনআইএ-র তদন্তকারীরা। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং এসআইবি’র ‘পি ডেস্ক’ও (পাকিস্তান ডেস্ক) নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করত আমির সম্পর্কে।
লালবাজারের প্রাক্তন এক পুলিসকর্তার কথায়, একটা সময় আমির রেজা খানের গতিবিধি জানতে জেলবন্দি আফতাব আনসারি এবং বেনিয়াপুকুরে আমিরের পরিবারের সদস্যদের ফোনে-ফেসবুকে নিয়মিত নজরদারি চালাতেন গোয়েন্দারা। আমেরিকান সেন্টার হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার তথা কলকাতা পুলিসের অবসরপ্রাপ্ত ডিসি অনিল কর জানিয়েছেন, করাচিতে আমির রেজা খান কোথায় থাকছে, তা আমরা জানতাম। এমনকী কোন মসজিদে নামাজ পড়তে যেত, সেও অজানা ছিল না। মাঝে আবার কাঠমাণ্ডুতে আমিরের গতিবিধি খবর আসছিল। কিন্তু তারপর আর বলার মতো ইনপুট ছিল না।