নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক বাসু চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজে নিজের বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ছবি মানেই মুম্বই শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক জগতে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হল। শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লিখেছেন, ‘বাসু চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তাঁর কাজ ছিল অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন ও হৃদয়গ্রাহী। যা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে পেরেছিল। তাঁর পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি রইল সহানুভূতি।’ বাসুবাবুর ‘মঞ্জিল’ ছবিতে কাজ করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। সেই কথা উল্লেখ করে বিগ-বি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রয়াত পরিচালককে। ট্যুইট করে শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বাসুবাবুর মৃত্যু চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেছেন ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অশোক পণ্ডিত। বাসু চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘স্বামী’, ‘আপনে পরায়ে’ ও ‘জিনা ইয়াহাঁ’— তিনটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শাবানা আজমি। এর জন্য নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করেছেন অভিনেত্রী। শোকবার্তায় সেই কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
১৯২৭ সালে বাসুবাবুর জন্ম রাজস্থানে আজমির শহরে। তবে, তাঁর বাবা সরোজ চট্টোপাধ্যায় রেলে বদলির চাকরি করায় খুব ছোটবেলাতেই তিনি চলে আসেন মথুরায়। বাংলা বাইরে থাকলেও তাঁর শিকড় ছিল এ রাজ্যেই। মুম্বইয়ের একটি পত্রিকায় কার্টুনিস্ট হিসেবে তাঁর কর্মজীবনের শুরু। তবে, ফিল্মের প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রথম থেকেই ছিল। তাই যৌবনে ফিল্ম সোসাইটির সদস্য হয়েছিলেন। পরিচালনায় আসার আগে তিনি হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় ও বাসু ভট্টাচার্যের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। বাসু চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত প্রথম ছবি ‘সারা আকাশ’ (১৯৬৯)। যার চিত্রনাট্যের জন্য তিনি নিজে ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়াও এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফার কে কে মহাজন পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। তাঁর দীর্ঘ কাজের তালিকায় রয়েছে—‘রজনীগন্ধা’, ‘ছোটি সি বাত’, ‘দিল লাগি’, ‘খাট্টা মিঠা’, ‘বাতোঁ বাতোঁ মে’, ‘উস পার’, ‘চিৎ চোর’, ‘পিয়া কা ঘর’, ‘শিশা’র মতো বক্সঅফিস হিট ছবি। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতেও রয়েছে তাঁর অবদান। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’, ‘চুপি চুপি’, ‘হচ্ছেটা কি’-র মতো বাংলা ছবি তিনি পরিচালনা করেছেন। বড়পর্দার মতো তিনি ছিলেন ছোটপর্দারও জাদুকর। রজিত কাপুর অভিনীত হিন্দি ‘ব্যোমকেশ বক্সী’, প্রিয়া তেণ্ডুলকর অভিনীত ‘রজনী’ তাঁরই সৃষ্টি।