নয়াদিল্লি, ২২ মে: রেকর্ডের পর রেকর্ড! সংক্রামিতের সংখ্যা প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৮৮ জন। এর আগে একদিনে এত মানুষ সংক্রামিত হননি। তালিকায় এই রেকর্ড বৃদ্ধির জেরে দেশে একধাক্কায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও অনেকটাই বেড়েছে। মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মোট আক্রান্ত ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৪৭ জন। এর মধ্যেই বিশেষজ্ঞদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ওয়ার্ল্ডোমিটার্স নামে বেসরকারি এক সংস্থার তথ্য। তা থেকে জানা গিয়েছে, মোট আক্রান্তের হিসেবে পিছনে থাকলেও চিকিৎসাধীন রোগী বা অ্যাক্টিভ কেসের হিসেবে স্পেন, ইতালিকে টপকে গিয়েছে ভারত। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে বর্তমানে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ৬৬ হাজার ৩৩০। সেখানে বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে ও স্পেনে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০ হাজার ৯৬০ এবং ৫৫ হাজার ২১৯। ওই সংস্থা সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা গিয়েছে, অ্যাক্টিভ কেসের হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রাজিল ও ফ্রান্সের পরেই রয়েছে ভারত।
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, গুজরাত ও দিল্লি। আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্রই। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেশের মোট আক্রান্তের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এরাজ্যে। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৪৫ জন। মহারাষ্ট্রে বর্তমানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার ৬৪২। এর মধ্যে শুধু মুম্বই শহরেই আক্রান্ত ২৫ হাজারেরও বেশি। সেখানে করোনা মোকাবিলায় রাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বড় মাথাব্যথার কারণ ধারাভি বস্তি। সংক্রমণের হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে মোট আক্রান্ত ১৩ হাজার ৯৬৭ জন। তিন নম্বরে গুজরাত- ১২ হাজার ৯০৫ জন। দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৬৫৯ জন। যদিও রাজ্য সরকারের হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার পেরিয়েছে- ১২ হাজার ৩১৯। একদিনে সংক্রামিত হয়েছেন ৬৬০ জন। যা রেকর্ড। রাজধানীতে এখনও পর্যন্ত একদিনে এত সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হননি। দিল্লিতে এনিয়ে পর পর তিনদিন ৫০০ বা তার চেয়েও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলেন।
সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৪৮ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৮৩ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রেই গত একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জনের। সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৪৫৪। ৭৭৩ জন মারা গিয়েছেন গুজরাতে। মধ্যপ্রদেশে মৃতের সংখ্যা ২৭০। এমপাওয়ার্ড গ্রুপ ১-এর চেয়ারম্যান ভি কে পাল আরও জানিয়েছেন, দেশে মৃতের সংখ্যার ৮০ শতাংশই মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিতে বাসিন্দা।
দেশে আক্রান্ত-সংখ্যা বৃদ্ধিতে রেকর্ডের মধ্যেও রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার হার দেখে কিছুটা আশাবাদী স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কর্তারা। এখনও পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫৩৪ জন (৪০.৯৭ শতাংশ) সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে আরও জানানো হয়েছে, সঠিক সময়ে লকডাউনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যু- দুইই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। বাঁচানো গিয়েছে বহু প্রাণও। নীতি আয়োগের (স্বাস্থ্য) ডাঃ ভি কে পাল এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন, গত ২৫ মার্চ থেকে লকডাউনের ফলে ১৪-২৯ লক্ষ মানুষকে করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা গিয়েছে। পাশাপাশি, ৩৭-৭৮ হাজার মানুষের প্রাণও বেঁচেছে। এদিকে, শুক্রবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত মোট ২৭ লক্ষ ৫৫ হাজার ৭১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত চারদিন ধরে প্রতিদিন ১ লক্ষের বেশি টেস্ট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা।