কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মধ্য প্রাচ্যে আরও এক ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে। লক্ষণও ছিল মোটামুটি সার্স কোভ-এর মতোই। এই কারণে ওই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছিল মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স কোভ। দুটি সংক্রমণের ক্ষেত্রেই মৃত্যুহার ছিল যথেষ্ট বেশি।
এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হল করোনা ভাইরাস ডিজিজ বা ‘কোভিড ১৯’ ।
দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে কোভিড ১৯-এর সঙ্গে আগের ‘সার্স’ এবং ‘মার্স’-এর কোনও তুলনা চলে না। সার্স এবং মার্সের তুলনায় কোভিড ১৯ ছড়ায় অনেক দ্রুত। তবে সার্স এবং মার্সের তুলনায় কোভিড-এ প্রাণহানির মাত্রা অনেক কম।
তবে মুশকিল অন্যত্র। সার্স কিংবা মার্স-এর ক্ষেত্রে ঘটেছিল অন্যরকম ঘটনা। সংক্রমিত হওয়ার পর বেশিরভাগ আক্রান্তের শরীরেই দেখা দিয়েছিল তীব্র উপসর্গ। ফলে উপসর্গের ভিত্তিতে আক্রান্তদের দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছিল ও আইসোলেশনে পাঠানো যাচ্ছিল। নোভেল করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে কিন্তু সেই সুযোগ কম।
কারণ নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর মাত্র ১৫ শতাংশ রোগীর তীব্র শারীরিক উপসর্গ দেখা যায় ও কয়েকজনকে হাসপাতালেও ভর্তি করার প্রয়োজন পড়ে। মোট আক্রান্তের মধ্যে চার-পাঁচ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দরকার পড়ে ইনটেনসিভ কেয়ার এবং ভেন্টিলেটরের সাহায্য। অথচ ৮০ শতাংশ নোভেল করোনা সংক্রমিতের ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেয় সামান্য। এই ৮০ শতাংশই কিন্তু চিন্তার কারণ। রোগীরা প্রথমদিকে বুঝতেই পারেন না, তাঁরা নোভেল করোনা ভাইরাস আক্রান্ত! গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো নোভেল করোনা উপসর্গহীন অবস্থাতেও দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। অর্থাৎ এই ৮০ শতাংশ মানুষ শারীরিক লক্ষণহীন অবস্থায় নিজের অজান্তেই দেশের বাকি সুস্থ নাগরিকের মধ্যে দাবানলের মতোই সংক্রমণ ছড়াতে পারেন। ঠিক এই কারণেই দেশজুড়ে ‘লকডাউন’-এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, গড়ে একজন ব্যক্তি অন্তত দু’জন ব্যক্তিকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখেন। তবে রোগ ছড়ানো আটকাতে পারলে এই অনুপাত এক শতাংশেরও নীচে নেমে আসতে বাধ্য। অতএব দেশজুড়ে লকডাউনের সুফল মিলবেই। মহামারীর সময় ‘সামাজিক দূরত্ব’ পালনের গুরুত্ব ঠিক এখানেই। নাগরিককে বুঝতে হবে, এখন কষ্ট হলেও, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তের সুফল লাভ করবেন তাঁরাই। প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বপূর্ণ আচরণই পারে মহামারী ছড়িয়ে পড়া আটকাতে।
চিন্তার ব্যাপার হল, আগামী তিন থেকে ছ’ মাস নানাভাবে এই ভাইরাস নাগরিক সমাজে ফিরে আসবে ও হুল ফোটাবে। অতএব নাগরিকদের উচিত, দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক দূরত্ব পালন করা। তাই এখন থেকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন কঠোরভাবে মেনে চলার চেষ্টা করুন সবাই।
অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে গাইডলাইন মেনে চলার প্রয়োজন অনেক বেশি। তার কারণও রয়েছে। সম্প্রতি, আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির তরফে একটি বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ-এর রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা বেড়ে যায় ১০.৫ শতাংশ। এদিকে, আমাদের দেশের প্রতি একলাখ নাগরিকের মধ্যে ৫ হাজার ৬৮৪ জনের ক্রনিক হার্ট ডিজিজ-এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এই বুলেটিনে এও বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজে ভোগা রোগীর ৬.৩ শতাংশের প্রাণহানি ঘটবে।
অতএব আমাদের দেশের নাগরিকের জীবনযাত্রা পরিবর্তন করার প্রয়োজন রয়েছে। জীবনযাত্রায় শিথিলতা এলে ফের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়বে।