কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
প্লেগ: ঘটনাস্থল গুজরাতের সুরাত। ১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ব্যাপক বৃষ্টি হয় সুরাতে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডুবে যায় সেখানকার নিচু এলাকা। জল নামতেই সুরাতজুড়ে বিশেষ করে বেদ রোড সংলগ্ন এলাকায় নজরে আসে অগণিত গবাদি পশুর দেহ। সঙ্গে ইঁদুরের পচা-গলা দেহাবশেষ। ঘটনার পাঁচদিন পর জানা যায়, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেদ রোডের এক হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে এ ব্যক্তির। এরপর একই উপসর্গ নিয়ে প্রাণ হারান আরও আটজন। শ্রীঘ্রই অন্যান্য হাসপাতাল থেকে একই উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু খবর আসতে থাকে। স্বাস্থ্যকর্তারা সরকারকে জানান, প্লেগে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা প্রাণ হারিয়েছেন।
শেষবারের মতো ভারত এই রোগের নাম শুনেছিল ১৮৯৬ এবং ১৯৩০ সালে। ওই সময় বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ প্লেগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুরাতে প্রাণ হারান ৪৯ জন। আর সন্দেহজনকভাবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ৩৯১ জন। তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-কে জানায়। আর অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে এই নিউমোনিক প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে দিল্লি, মুম্বই ও কলকাতায়। হাসপাতালে ভর্তি হন ৫ হাজার ৫০ জন। প্রাণ হারান চারজন। তদন্তকারী দল পাঠায় হু। বেদ রোডের বাসিন্দা ৫০০ পরিবারের ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন সুরাতের তৎকালীন উপ পুর কমিশনার (স্বাস্থ্য) এস কে মোহান্তি। শুরু হয়ে যায় কড়াকড়ি, নজরদারি, লকডাউন। মাত্র ১৪ দিনের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়ায় সুরাত। জীবাণুনাশ করা হয় গোটা বেদ রোড এলাকা।
সোয়াইন ফ্লু বা এইচ১এন১: ২০০৯ সালে মেক্সিকোতে প্রথম এই সোয়াইন ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ঘটে। পরবর্তী সময়ে দেশের ৭৪টি দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৯ সালের ১৬ মে হায়দরাবাদে ভারতে প্রথম আক্রান্তের হদিশ মেলে। আর ওই বছরই এই ভাইরাসে প্রাণ হারান ৯৮১ জন। এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আমুল বদলে দিয়েছে। বাড়ানো হয় নজরদারি। মহারাষ্ট্রে তৈরি করা হয় আইসোলেশন ওয়ার্ড। আইসিএমআরের তৎকালীন ডিজি ডাঃ ভি এম কাটোচ বলেছেন, ‘ওসেল্টামিভির’ ওষুধের প্রয়োগে রোগীরা সেরে ওঠেন।
বার্ড ফ্লু বা এইচ৫এন১: ঘটনাস্থল মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ। ২০০৫-০৬ সালে প্রথম এই ইনফ্লুয়েঞ্জা নজরে এলেও হু’য়ের তথ্য মতে তা শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে। এবং এখনও তা চলছে। ১৭টি দেশের ৮৬১ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২০০৫ সালে মহারাষ্ট্রে প্রথম ধরা পড়েছিল বার্ড ফ্লু। পরের বছর তা মধ্যপ্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর মণিপুর, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের বেশ কিছু এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। মেরে ফেলা হয়েছিল বেশ কয়েক লক্ষ পাখি। পাখিপালকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই রোগে ২৫ দফায় ১৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছিল। আক্রান্ত এলাকার তিন কিমি পরিধিজুড়ে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল। দফায় দফায় বার্ড ফ্লু’র জেরে ২০১২ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে দু’টি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জিকা: ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ রাজস্থানের শাস্ত্রীনগর, বিদ্যানগর ও সিন্ধি ক্যাম্পের মতো খারাপ নিকাশি এলাকায় প্রথম জিকার সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল। এই রোগের উপসর্গগুলি হল, জ্বরের সঙ্গে শরীরে র্যাশ, গাঁট ও পেশিতে ব্যথা, মাথা ধরা ইত্যাদি। এবং সবথেকে ঝুঁকি অন্তঃসত্ত্বাদের। পরীক্ষা করে জানা যায়, এই ভাইরাসের বাহক হল এডিস ইজিপ্টাই মশা। তবে, ডিসেম্বরের শেষের দিকে এই রোগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে সারাদেশে জিকায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৯৪ জন। আর রাজস্থানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫৯ জন। তারপরেই ছিল মধ্যপ্রদেশ —১৩০ জন। সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজস্থানের স্বাস্থ্যদপ্তর মশার লার্ভা নিধন অভিযানে নামে। পাশাপাশি, অন্তঃসত্ত্বাদের চিহ্নিত করতে শুরু করে। তবে, অনেক অন্তঃসত্ত্বা আক্রান্ত হলেও কারও মধ্যে মাইক্রোসেফালি বা গুলিয়ান-বার সিনড্রোম দেখা যায়নি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের সংক্রমণ না ছড়াতে পারে, সেজন্য গত বছরের মার্চে এটি অ্যাকশন প্ল্যান নিয়েছে রাজস্থান সরকার।
নিপা: ২০১৮ সালে কেরলে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান ১৭ জন। পরের বছর মারা যান আরও ১৬ জন। যদিও ২০০১ শিলিগুড়িতে মৃত্যু হয় ৪৫ জনের। যাঁদের মধ্যে ছিলেন বেশ কয়েকজন ডাক্তার, নার্স। সেই ঘটনার তদন্ত করতে শিলিগুড়ি যান ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষক ডাঃ মনদীপ চাদা। তখনই নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা জানা যায়।
এই ঘটনার কয়েক বছর পর কেরলের কোঝিকোড়ে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে দ্রুততার সঙ্গে এই রোগকে ঠেকানো গিয়েছিল। আজ করোনা রোধে স্বাস্থ্যবিভাগ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে কথা বলছে, তা নিপা মোকাবিলা থেকেই শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি, ইবোলা মোকাবিলায় হুয়ের নির্দেশিকা মেনে নিপার সংক্রমণ ঠেকানো হয়েছিল। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ২১ দিনের আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। প্রায় এক মাস পর কেরলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। নিপা সংক্রমণের জেরে পরবর্তী সময়ে আলাপুঝার এনআইভিতে তৈরি হয় ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড ভাইরোলজি। এরপর ২০১৯ সালে ফের নিপার প্রাদুর্ভাব ঘটলে তা সহজেই ঠেকানো গিয়েছিল।